মেলায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই
বাণিজ্য মেলা যেন রাজধানীবাসীর মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মেলামুখী মানুষের জনস্রোত রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে। যতটা না কেনাকাটা, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে ঘোরাঘুরি আর আড্ডাবাজি।
কর্মব্যস্ততা ও যানজটের ভয়ে যারা বছরে একদিনের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারেন না, তাদের অনেকের জন্য বাণিজ্য মেলা হয়ে উঠেছে মিলন মেলায়। একটু-আধটু কেনাকাটার পাশাপাশি বন্ধু বা নিকট আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো, হাসি-আড্ডায় মেতে ওঠা- এমন চিত্র এখন বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার তৃতীয় সপ্তাহিক ছুটির দিন আজ। ইতোমধ্যে মেলা অতিক্রম করেছে তার ১৮তম দিন। মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারণে এবার মেলার শুরুর দিকে কাঙ্ক্ষিত লোকসমাগম ছিল না। কিন্তু আজকের চিত্র একটু অন্যরকম। মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মেলায়।
বিক্রেতারা বলছেন, শেষের দিনগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায় বহুগুণ। এবারও তাই হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা মেলায় এসেছেন। যাত্রাবাড়ী বা শনির আখড়া, পুরান ঢাকার বকশিবাজার, নাজিরাবাজার; ধানমন্ডি, বাসাবো, খিলগাঁও, উত্তরা, বাড্ডা, হাজারীবাগ- রাজধানীর সব প্রান্ত থেকে মেলায় ছুটে আসছেন মানুষ।
এদিন উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি ভিড় করেছেন হাজারো গৃহকর্তা আর গৃহিণী। সঙ্গে ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছেন অনেকে। নিম্নবিত্ত থেকে বিত্তশালী- সব শ্রেণির মানুষের ভিড়ে ঠাসা আজকের বাণিজ্য মেলা।
দর্শনার্থীদের অভিযোগ, মেলামুখী পর্যাপ্ত পরিবহন ছিল না। সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার প্রবণতা। অনেকে গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে মেলায় এসেছেন। আদনান নামের এক দর্শনার্থী জানান, পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে, মেলায় বিক্রয়কর্মীদের ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। বেশি ভিড় ছিল গৃহস্থালি পণ্য এবং খাবারের দোকানগুলোতে। তারুণ্যের ভিড় দেখা গেছে মোবাইল ফোন, ব্লেজার ও কটির স্টলগুলোতে। সে তুলনায় ফাকা ছিল হোম অ্যাপ্লায়েন্স; যেমন টিভি, ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এসি ও ফার্নিচারের স্টলগুলোতে। বরাবরের মতো তরুণীদের ভিড় ছিল গহনার দোকানগুলোতে।
গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী বিক্রয়; বিশেষত প্লাস্টিক পণ্যের স্টল আরএফএল, বেস্টবাই, ইটালিয়ানো, বেঙ্গল হ্যাপিমার্ট, শরীফ মেলামাইনের স্টলে প্রবেশ করাই যেন দায়।
আরএফএলের বিক্রয়কর্মী সুমন জানান, আজ বিক্রির সব রেকর্ড ভেঙেছে। গত শুক্রবার একদিনে যা বিক্রি হয়েছিল, এদিন তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুন বিক্রি হয়েছে। কথা হয় মধ্য বাসাবোর গৃহিণী আসমা বেগমের সঙ্গে। মেলায় এসেছেন মাদারীপুর থেকে বেড়াতে আসা ননদ রাফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। বলেন, মেলায় যা বিক্রি হয় তা বাসার আশপাশেই পাওয়া যায়। ননদের শখ ছিল বাণিজ্য মেলায় আসার। তাই এলাম। সঙ্গে কিছু গৃহস্থালি পণ্য কিনে নিলাম।
উত্তরা থেকে এসেছেন কলেজপড়ুয়া রোকন, সাফি, শরীফ, আহাদসহ আরো কয়েকজন। আহাদ জানায়, স্রেফ ঘুরতে এসেছি। তবে নড়াইল থেকে আসা শরীফ হাজার টাকায় ব্লেজার কিনেছে।
মেলার ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও তাদের বড় অংশই ভিড় করছে খাবারের স্টলগুলোতে। বিশেষত ফাস্টফুড ও আইসক্রিমের স্টলে। শীতের হালকা ঠান্ডার মধ্যেও তরুণ-তরুণী ও শিশুদের ভিড় লেগে ছিল ইগলু বা ব্লুপের স্টলে।
মেলায় বড় স্টল বা প্যাভিলিয়নগুলো ছিল ফার্নিচার ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। তবে আজ এসব প্যাভিলিয়ন বা স্টলে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। কথা হয় সনি-র্যাংগস স্টলের বিক্রেতা হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় বিক্রি খুব বেশি নয়। তবে বিক্রির তুলনায় আমাদের পণ্য ক্রেতাদের কাছে পরিচয় করানোই মূল উদ্দেশ্য। সব শ্রেণির ক্রেতা আমাদের স্টলে আসছেন। ঘুরে ঘুরে দেখে যাচ্ছেন।
‘অন্য দিনের চেয়ে এদিনের বেচাবিক্রি বেশি। হয়তো সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি বিক্রি হবে’- যোগ করেন তিনি।
এমএ/এমএআর/পিআর