সবজিতে স্বস্তি, পেঁয়াজ স্থিতিশীল
শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে স্বস্তি নেমে এসেছে। দাম হাতের নাগালে থাকায় বাজার করতে আসা ক্রেতারা পছন্দ মতো সবজি কিনতে পারছেন। সবজির পাশাপাশি কিছুটা দাম কমেছে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া এবং খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শীতের সব সবজিই এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। টমেটো, শিম, লাউ, কাঁচা-পাকা মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি (শালগম), পেঁয়াজের কলি, বেগুন, মুলা, লাল শাক, পালন শাক, লাউ শাক কোনো কিছুরই কমতি নেই বাজারে। ফলে ৫ টাকার মধ্যেই মিলছে শাক। আর অনেক সবজিই পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসের শেষার্ধে এসে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। দাম বাড়তে বাড়তে কিছু কিছু বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০০ টাকা হয়ে যায়। তবে ডিসেম্বরের শেষার্ধ থেকে কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। একই অবস্থা নতুন দেশি পেঁয়াজের। তবে পুরাতন দেশি পেঁয়াজের দাম এখনও ১০০ টাকার বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের অন্যতম প্রধান সবজি ফুলকপি বিক্রি যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পিচ। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। শালগম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। বেগুনের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। মুলা পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে পাকা টমেটো।
সবজির এমন দামে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। খিলগাঁও তলতলা বাজারে সবজি কিনতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে সবজির দাম বেশ কম। আগে এক কেজি শিম কিনতে যে টাকা খরচ হতো এখন সেই দাম দিয়ে ৩-৪ রকমের সবজি কেনা যায়।
রামপুরা বাজার থেকে সবজি কেনা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সদরুল বলেন, শীতকালে সব সবজির দামই কম থাকে। তারই প্রভাব এখন বাজারে দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ সবজির দামেই এক মাসের ব্যবধানে বেশ কমেছে। তাবে শিম, ফুলকপি ও টমেটোর দাম আরও কম হওয়া উচিত। তারপরও এখন বাজারে সবজির দাম যা, তা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক।
এ দিকে পেঁয়াজের আকাশচুম্বী দামের কারণে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনেক বাজারেই দেশি পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। সেই অবস্থা এখনও বিদ্যমান। অধিকাংশ ছোট ছোট বাজারগুলোতে পুরাতন দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নতুন দেশি পেঁয়াজ ও আমদানি করা পেঁয়াজের ঘাটতি নেই বাজারে। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর পুরাতন দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. রুবেল মিয়া বলেন, বাজারে পুরাতন পেঁয়াজের সরবরাহ কম আছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। তবে নতুন ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশ কমেছে। প্রায় এক মাস ধরে আমদানি করা ও নতুন দেশি পেঁয়াজের দাম কম রয়েছে। সামনে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে, এতে দামও কমবে বলে আশা করছি।
এ দিকে সবজির পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তি রয়েছে কাঁচামরিচে। রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ আগের সপ্তাহের মতোই ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নতুন আসা পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। আগের সপ্তাহেও এই দামে বিক্রি হয় শীতের সবজিটি। কাঁচা পেঁপের দাম আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা রয়েছে। শিম পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। লাউ’র দাম আগের মতোই ৩০ থেকে ৫০ টাকা। নতুন আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আর পুরাতন আলু পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে।
হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, সব ধরনের সবজির দামই এখন কম। শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ার কারণে বেশির ভাগ সবজির দাম বেশ আগেই কমেছে। এখন দাম কমার তালিকায় রয়েছে পাকা টমেটো। এই সবজির দাম কমে অর্ধেকে চলে এসেছে। আর লাল শাক, পালন শাক মাত্র ৫ টাকা দিয়েই কেনা যাচ্ছে। দাম এমন কম থাকার কারণে আমাদের বিক্রিও বেড়েছে। আগে যারা এক পোয়া করে সবজি কিনতেন এখন তারা এক কেজি করে কিনছেন।
এমএএস/এআরএস/আইআই