অর্থনীতিতে তিন সারপ্রাইজ
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে বাড়া, মাথাপিছু আয়ের তুলনায় মাতৃমৃত্যুর হার কম হওয়া এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সীমিত বিনিয়োগ থাকার পরও অন্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো হওয়া, এ তিনটি বিষয়কে দেশের অর্থনীতির সারপ্রাইজ (বিস্ময়) হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলছেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের সুবিধায় রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এ সুবিধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এরপরও প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। আবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে পর্যান্ত বরাদ্দ না থাকার পরও অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে।
বৃহস্পতিবার ‘রিবেজিং অ্যান্ড রিভিশন অব জিডিপি : বাংলাদেশ পাসপেকটিভ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশগ্রহণ করা অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও অধ্যাপক এস আর ওসমানি। বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাস উদ্দিন প্রমুখ।
সেমিনারটি পরিচালনা করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম এবং সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি সারপ্রাইজ রয়েছে। এগুলো হলো- জিডিপি প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে বাড়ছে, মাথাপিছু আয়ের তুলনায় মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কম। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ কম হলেও অন্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দ কম হওয়ার পরও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত কিভাবে ভালো করছে এটা দেখার বিষয়। আমাদের দেশে দারিদ্র বিমোচন এখনো এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। দারিদ্র বিমোচন এখনও অনেক বাকি রয়েছে এজন্য ভাবতে হবে কিভাবে দারিদ্র ও বৈষম্য কমানো যায়। আর জনসংখ্যার বোনাস শুধু নাম্বার দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না, মান নিয়েও ভাবতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানো গেলে ২০১৯ সালের মধ্যেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। রোবটিকস ও প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াতে হবে।
তিনি বলেন, জিডিপির ভিত্তি বছর পরিবর্তন প্রয়োজন। কেন না এখন প্রযুক্তি, ই-কর্মাস, মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন নতুন বিষয় অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে। এসব জিডিপির হিসাবে আনতে হবে।
ড. মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি বামন প্রতিষ্ঠান মনে হয়েছিল। অর্থাৎ এর ব্যাপ্তি বাড়ছিল না। পরবর্তীতে কিছুটা ব্যাপ্তি বাড়লেও এখানে প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। বিবিএসর ক্রুটি থাকলে তা দূর করা দরকার। পরিসংখ্যানের মান উন্নত না হলে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের সুযোগ কম বলে সঞ্চয় বাড়ছে। তাই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে হিসাবের মধ্যে আনতে হবে।
ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছে। এটা ভালো। এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) গুরুত্ব দিয়েছে। এখন শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র নিরসন করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এমএএস/এমআরএম/আইআই