বিকাশে অবৈধ লেনদেনে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ
সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনে প্রবাসীদের টাকা আসছে বাংলাদেশে। সঠিক নিয়মে বিদেশ থেকে টাকা না আসায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রেমিট্যান্স থেকে। কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদন ধরে তদন্ত করে সতজন বিকাশ এজেন্টকে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানিয়েছে, দেশের কয়েকটি জেলায় অভিযান চালিয়ে বিকাশের সাতজন এজেন্টকে বুধবার গ্রেফতার করে করা হয়। এরপর ৮টি মানি লণ্ডারিং মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজশাহী গোদাগাড়ীর সাইফুল ইসলামের ছেলে মো. মান্নান (৩০), পাবনার সঙ্গীত কুমার পাল (৪৫), মো. জামিনুল হক (৩৮), মোজাম্মেল মোল্লা (৩৩), মো. হোসেন আলী (৪৫), চট্টগ্রামের লোহাগ্রাম এলাকার দিদারুল হক, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার আবু বকর সিদ্দিক।
পাবনায় অভিযানকালে একই অপরাধে জড়িত আরেক এজেন্ট মনোয়ার হোসেন মিন্টু (২৯) পালিয়ে যান বলেও জানিয়েছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মালিবাগস্থ সিআইডি’র প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি’র অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সারা দেশে ২ হাজার ৮শ’ বিকাশ এজেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ২৫টি এজেন্ট নাম্বার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলে জানানো হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদনেও ৭ বিকাশ এজেন্টের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠে। এরপর তদন্তে নামে সিআইডি’র অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিট।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমাতে প্রবাসীদের আয়ের অর্থ অবৈধভাবে দেশে পাচার করছে। যা মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ। চক্রটি ব্যাংকিং সেবায় না গিয়ে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে সে টাকা লেনদেন করছে। এক্ষেত্রে দেশে থাকা কতিপয় বিকাশ এজেন্ট এর সাড়ে জড়িত।
তিনি বলেন, তদন্তে দেখা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে ইলেক্ট্রনিক বার্তায় বাংলাদেশে জানানো হচ্ছে, চট্টগ্রাম, পাবনা কিংবা মাদারিপুরে টাকা পাঠাতে হবে। হুন্ডি দলে কিছু সদস্য দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের নিকট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় টাকায় স্থানীয়ভাবে পরিশোধ করছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বিকাশ এজেন্টরা কোনো ধরণের নিয়মের তোয়াক্কা না করে বার্তা অনুযায়ী কাঙ্খিত জায়গায় টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে বিকাশের হিসাব ব্যবহার করছে। এতে করে বিদেশ থেকে সরাসরি টাকা বাংলাদেশে না আসায় রেমিট্যান্সের কমছে বাংলাদেশের। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যসহ লেনদেনে। এমন লেনদেন মানি লণ্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১৭ (সংশোধিত ২০১৬) এর ২ (ক) ও(২) ধারা অনুযায়ী অর্থ বা সম্পত্তি পাচারের পর্যায়ভুক্ত।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানি লণ্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মানি লণ্ডারিং অপরাধের সাথে বিকাশেরে কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত চলছে। বিকাশের লেনেদেনে বেশ কিছু গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আমরা তদন্ত করছি। বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেলে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেইউ/এমবিআর/পিআর