কর্মী নিয়োগে এলআইসি বাংলাদেশের চতুরতা
কর্মী টানতে চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছে নতুন অনুমোদন পাওয়া জীবন বীমা কোম্পানি এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড। সিলেটে অনুষ্ঠিত বীমা মেলা প্রাঙ্গণে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বিতরণ করা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত এক লিফলেটে এ চতুরতার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
এলআইসি বাংলাদেশের সিলেট শাখার পক্ষ থেকে বিতরণ করা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতি ডলার ৮০ টাকা করে ধরলে বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, ইউনিট ম্যানেজোর এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট পদে নিয়োগের কথা বলা হয়ছে। বেতন-ভাতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কাজের ওপর ভিত্তি করে আকর্ষণীয় কমিশন এবং পুরস্কার দেয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশসহ ১৫টি দশে কার্যক্রম চালাচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজয় করে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এলআইসি) এখন বাংলাদেশে। বিশ্বে প্রায় ৩৬ কোটি গ্রাহক, প্রায় ১২ লাখ বিক্রয় প্রতিনিধি এবং পলিসি সংখ্যা ও দ্রুত দাবি পূরণে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বে প্রথম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে বীমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৬ সালে এলআইসি বাংলাদেশ ব্যবসা শুরু করে। কোম্পানিটিতে ভারতের লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের শেয়ার আছে। তবে ভারতের লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের সম্পত্তির সঙ্গে এলআইসি বাংলাদেশের সম্পত্তির কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে না। বাংলাদেশে কোম্পানিটির কী আছে সেটাই বিবেচনায় আসবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ভারতের লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের সম্পতির তথ্য দিয়ে এলআইসি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দেয়া কর্মী ও গ্রাহকদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। কারণ এলআইসি বাংলাদেশের কোনো কর্মী বা গ্রহককে ভারতের লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন থেকে সুবিধা দেয়া হবে না। এলআইসি বাংলাদেশের যে সক্ষমতা আছে তার ওপর ভিত্তি করে গ্রাহক ও কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
এদিকে ২০১৬ সালের ব্যবসা সম্পর্কে এলআইসি বাংলাদেশ আইডিআরএ’র কাছে যে তথ্য দিয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ আছে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ইতোমধ্যে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের আট কোটি ৫০ লাখ টাকা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
লাইফ ফান্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডে এক টাকাও নেই। উল্টো লাইফ ফান্ড দুই কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হওয়ার অন্যতম কারণ ব্যবসা কম হওয়া এবং খরচ বেশি হওয়া। আর লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হয়ে পড়লে গ্রাহকের টাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা হারায়।
এলআইসি বাংলাদেশের ব্যবসার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালে কোম্পানিটি বীমা পলিসি বিক্রির বিপরীতে ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৯ টাকায় প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। মোট বীমা পলিসি বিক্রি হয়েছে ২১৭টি। এই বীমা পলিসি বিক্রির বিপরীতে ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি সাত লাখ ২৩ হাজার ৯৯৫ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে এলআইসি বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ দাস গুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, এলআইসি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এটা ঠিক আছে। এটি বাংলাদেশে নিবন্ধিতও। তবে এই কোম্পানির ৫০ শতাংশ মূলধন আসছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন থেকে। সে হিসাবে ১৫টি দেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের যে সম্পদ আছে তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের সম্পদের সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশের গ্রাহক বা কর্মীরা পাবে কি? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সুবিধা, অসুবিধার তো কিছু নেই। একটি সংস্থা বিশ্বের ১৫টি দেশে ব্যবসা করে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এমএএস/বিএ/এমএস