ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতা ঘাটতিতে বাড়ছে অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৩৪ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে। প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা, ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনাগুলো বেড়েই চলেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘করর্পোরেট ইথিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইন ব্যাংকস : বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ’শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে।

অনিয়ম করলেও শাস্তি না হওয়াকে আর্থিক অনিয়মের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, নৈতিকতা বিষয়ে উৎসাহ প্রদানের অভাব এবং ব্যাংকারদের অল্প বেতন-ভাতা এর জন্য দায়ী। এ গবেষণা প্রতিবেদনের জন্য ২০০ জন ব্যাংকারের সাক্ষাৎকার নেয় বিআইবিএম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকিং ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে আস্থার উপর নির্ভরশীল। আমানতকারীদের আস্থার সংকট শুরু হলে ব্যাংকিং ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি ব্যাংক আমানতকারীদের আস্থা সংকটের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গ্রাহকরা আমানতের অর্থ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও ব্যাংকটি চাহিদামতো সেই অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারছে না। এই সংকট ব্যাংকটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমদানি-রফতানিভিত্তিক অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রেই এই অভিযোগটা সবচেয়ে বেশি। তবে অর্থ পাচার নিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা অনেকাংশেই সত্য নয়। সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে পরিমাণ অর্থ রাখার কথা বলা হয় তার পরিমাণ অত বেশি হবে না।

তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচার সংক্রান্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় কঠোর অবস্থানে। সব ধরনের অর্থপাচার ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানকার বোর্ড সুশাসন বাস্তবায়নের পরিবর্তে ঋণ অনুমোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের বোর্ডের মূল কাজ হলো নীতি প্রণয়ন এবং নজরদারি করা। কিন্তু বাংলাদেশে সুশাসনের সংস্কৃতির প্রচলন নেই।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় সবখানেই দেখা দিয়েছে। ভোগবাদী অর্থনীতির কারণে মানুষ সবকিছুই ভুলে যাচ্ছে। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে ব্যাংকের উপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। ব্যাংকের উপর মানুষ এখন আর ভরসা করতে পারছে না। এর উন্নতি করতে হবে। মানুষের কষ্টের কথা শোনার জন্য আর্থিক ন্যায়পাল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, একটা ব্যাংকের স্টেকহোল্ডার হলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড এবং অপরাধ চক্র। আজকের এই আয়োজনে তারা কেউ নেই। একটি বিদেশি ব্যাংকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মাত্র একজন ব্যক্তির অপরাধের কারণে ২০০ বছরের একটি ব্যাংক ধসে পড়েছে। ব্যাংকের আস্থা সংকট খেলাপি ঋণের চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ইমেজ সংকট একটি ব্যাংকের জন্য খুবই খারাপ দিক। ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের জন্য অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এমইউএইচ/ওআর/এমএস