বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বাড়ছেই
বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩১ কোটি ১০ লাখ (৩৩১১ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী দাঁড়ায় প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের পণ্য ও সেবা উভয় বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। একইসঙ্গে রফতানি আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহের ধীরগতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমদানি হয়েছে তবে রফতানির প্রবৃদ্ধি বাড়েনি। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও এখন কম। সব মিলিয়ে চলতি হিসাব ঋণাত্বক হয়ে পড়েছে। এ ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তা অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। তবে সে হারে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে আয় হয়েছে এক হাজার ১৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৭১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে অক্টোবর শেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৩০১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা টাকার হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
আলোচিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং রফতানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি অনেক বেশি।
এদিকে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরজুড়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার (-) ঋণাত্মক হয়। যা এখনও অব্যাহত রযেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গেল অর্থবছরে তা ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। অক্টোবরেও এ ধারা অব্যাহত রযেছে।
অক্টোবর শেষে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ২৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর এ খাতে আয় করেছে মাত্র ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসেবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৩ কোটি ডলার। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১০৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে মোট ৭১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
এসআই/এমআরএম/এএইচ/এমএস