ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় ত্রুটির কারণে এনআরবিসির অনিয়ম’

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:১৪ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের অভাব ছিল। সেখানে কিছু অনিয়মও হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান তমাল এস এম পারভেজ। এনআরবি ব্যাংকের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় অনিয়ম হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের পাঁচ সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তমাল এস এম পারভেজ।

এনআরবিসির চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকের পর্ষদ পুনঃগঠন হয়েছে। নতুন যারা ব্যাংকটির নেতৃত্ব নিয়েছেন তারা সবাই বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আমাদের কাছে এখনও ব্যাংকের পুরো আর্থিক বিবরণী আসেনি। আমরা সবকিছু জেনে আগামীতে আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানাব।

তমাল পারভেজ বলেন, ব্যাংক কাজ করে জনস্বার্থকে নিয়ে। জনগণের আমানত এখানে আছে। আমরা মনে করি, জনগণের আমানতে একটা ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। আমাদের ব্যাংকের কিছু কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের সমস্যা ছিল। কিছু কমপ্লায়েন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা যারা বিদেশে থাকি অর্থ উপার্জন করি। তারা এখানে বিনিয়োগ করেছি। তবে তার চেয়ে দশগুণ টাকা আমানতকারীর। তাই আমাদের নিজস্ব একটি দায়িত্ববোধ আছে।

জনগণ (আমানতকারী) যাতে কোনো ঝুঁকিতে না পরে। সব ঝুঁকি আমরা কাধে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। একই সঙ্গে একটি বার্তা দিতে চাই এ ব্যাংকে কোনো ঝুঁকি নেই। আমরা প্রবাসীরা রেমিট্যান্স আনি। এদেশকে দেয়ার আছে, কিছু নেয়ার নেই।

ব্যাংকের যে সমস্ত অনিয়ম ছিল তা দূর করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে আছে। এনআরবি ব্যাংক যে জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করব। প্রবাসীদের জন্য আমরা আলাদা পণ্য আনব। আগের সব অনিয়ম চেঞ্জ হবে।

ব্যাংকের পর্ষদের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের ও কমপ্লায়েন্সের অভাব ছিল। ব্যাংককে কি হচ্ছে তা সব সময় বোর্ডে আসত না, এটাই একমাত্র সমস্যা। বোর্ড ব্যাংকের সার্বিক চিত্র জানত না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যে ব্যাংকের যে সমস্যা হচ্ছে তা জানত না। এসব সমস্যা এখন বোর্ডে আসবে।

পর্ষদের সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ আছে বা সমস্যা নেই উল্লেখ করে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, গতকাল সবার উপস্থিতে নতুন পর্ষদ গঠন হয়েছে। এখানে যারা এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এছাড়াও নতুন পর্ষদ নিয়ে অন্য কোনো স্বার্থও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ব্যাংকের সব ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। এসব অনিয়মে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা নিজেরাই দূর করতে কাজ করছি। এখানে বেনামের কেউ শেয়ার পাবেন না।

এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার সমালোচনা করে এনআরবিসির চেয়ারম্যান বলেন, এনআরবি ব্যাংকগুলোর জন্য ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের যে গাইডলাইন দিয়েছিল সেখানে ত্রুটি ছিল। সেখানে সমস্যা। আমি বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। আমার অর্থ যদি সরকারি চ্যানেলে বিদেশ থেকে আসে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন জানতে চায়। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন্সের অভাব।

বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এনআরবি ব্যাংক করল। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল এনআরবি বা প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু এখানে এনআরবিদের কোনো নীতিমালা নেই। সাধারণ ব্যাংক আর এনআরবি ব্যাংকগুলো একই নিয়মে চলছে। আর যেসব অনিয়ম হয়েছে তা গাইডলাইন না থাকার কারণেই হয়েছে। গাইডলাইনে সুযোগ থাকলে অনিয়ম হবেই বলে জানান তিনি। এসময় বর্তমানে ব্যাংকটি ২০০ কোটি টাকা লাভে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, আমি কালকে সবাইকে বার্তা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করব না। এমডি কোর্টে গিয়েছে তার সব কাগজপত্র আমাদের কাছে নেই। এই মুহূর্তে আমরা মনে করছি উনাকে ছুটি দিব।

পর্ষদে বহিরাগতদের স্থান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিনিধি দিয়ে ব্যাংক চালানো যায় না। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। এখন বাইরের লোক ঢুকতে পারবে না। ব্যাংকের এখন ইমেজ চেঞ্জ করব।

আগের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসাত আলীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার ব্যর্থতার কারণে পদত্যাগ করেছেন। আমি দায়িত্ব নিয়েছি। ব্যর্থ হলে আমিও দায়িত্ব ছেড়ে দিব।

এর আগে ১০ ডিসেম্বর (রোববার) ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী পদত্যাগ করেন। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তমাল এসএম পারভেজ। সভায় বাধ্যতামূলক তিনমাসের ছুটিতে পাঠানো হয় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে। পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য কমিটির প্রধানরাও পদত্যাগ করেন।

সভায় পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে তৌফিক রহমান চৌধুরী পদত্যাগ করলে ওই পদে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম। নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আবু বকর চৌধুরী। ওই পদে ছিলেন মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম। নুরুন নবী অডিট কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করায় সেখানে নির্বাচিত হয়েছেন রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু।

এছাড়া রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন আদনান ইমাম। ওই পদে ছিলেন সৈয়দ মুন্সেফ আলী। এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানের ছুটি কার্যকর হলে সেখানে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজী মো. তালহা।

এসআই/এমএআর/জেএইচ/জেআইএম/আইআই

আরও পড়ুন