একনেকে ৮ প্রকল্পের অনুমোদন
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজকের একনেক সভায় ১০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্প গুলোর মধ্যে ছয়টি নতুন এবং দুটি সংশোধিত। অপরদিকে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন আট হাজার ৭১০ কোটি টাকা। সংস্থার নিজস্ব অর্থায় ৩৯৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১,৪৪৮ কোটি টাকা।
নিজ এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণের জন্যে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে বিশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে সরকার। ২৮৪ জন সংসদ সদস্য বছরে চার কোটি টাকা করে পাঁচ বছরে এ পরিমাণ টাকা পাবেন।
তবে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১৬ জন সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা আপাতত এ বরাদ্দ পাবেন না। অচিরেই সিটি কর্পোরেশন এলাকার সংসদ সদস্যদের জন্যে আলাদা একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এ অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২’ নামক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্যে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
প্রকল্পটি নিয়ে একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থ সংসদ সদস্যগণ নিজেরা সরাসরি ব্যয় করতে পারবেন না। তারা তাদের পছন্দমতো তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সেসব বাস্তবায়ন করবে।
আজকের সভায় জানানো হয়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৪৬৬ কি.মি. উপজেলা সড়ক, এক হাজার ৪৩০ কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক এবং ছয় হাজার ১৭৩ কি.মি. গ্রাম সড়কের উন্নয়ন হবে। সেই সাথে চার হাজার ৫৯৭ কি.মি. পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিও সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও মানবপাচার রোধে এবং ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের চোরাচালান বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আজকের একনেক সভায় এ সংক্রান্ত দুটো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি প্রকল্প নতুন এবং অপরটি সংশোধিত। অনুমোদিত প্রকল্প দু’টির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
সভার বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্ডার ম্যানেজম্যান্ট ইক্যুইপমেন্ট ফর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (প্রথম সংশোধিত) নামক প্রকল্পের আওতায় বিজিবির জন্য জিএসপি মেশিন উইথ কলিগ পজিশন, থার্মাল ইমেজিং বাইনোকুলার, ফগার মেশিন, নাইট ভিশন গোগলস, স্যাটেলাইট ফোনসহ প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস কেনা হবে। ফলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান কমে আসবে।
অপরদিকে, ‘সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র ৬০টি বিওপি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সীমান্ত এলাকায় ৬০টি বর্ডার আউটপোস্ট নির্মিত হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সীমান্তে সর্বমোট ৮৮৩টি ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ৬৬৭টি ক্যাম্পের ভবন ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২১টি সীমান্তবর্তী জেলার ৬০টি ক্যাম্পের ভবন নির্মাণ করা হবে। ফলে বিজিবি সদস্যগণ স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপদ আবাসন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ সময় আরো বলেন, পুলিশ বাহিনীর ১৯টি পুরনো জরাজীর্ণ অস্ত্রাগারের স্থলে পর্যাপ্ত সুবিধাসহ আধুনিক অস্ত্রাগার নির্মাণ করবে সরকার। এজন্য আজকের সভায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ছয়টি নতুন জাহাজ ক্রয় করবে। আজকের একনেক সভায় এ সংক্রান্ত আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে বর্তমানে আটটি জাহাজ রয়েছে। এদের গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি। আজকের সভায় অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় বিএসসি ছয়টি জাহাজ ক্রয় করবে। এর মধ্যে তিনটি তেলবাহী জাহাজ এবং বাকি তিনটি পণ্যবাহী জাহাজ। প্রতিটি জাহাজের ধারন ক্ষমতা ৩৯ হাজার টন।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরো বাড়বে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন জ্বালানি তেল পরিবহনের দায়িত্ব নিতে পারে।
অন্যদিকে খাদ্যশস্য, চিনি, সিমেন্ট, সার ইত্যাদি পরিবহনের দায়িত্বও শিপিং কর্পোরেশন নিতে পারে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৪৩ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১৪৪৮ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৯৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২০১৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এমএম/বিএ/এমআরআই