ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে ৭ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:২৭ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৭

ব্যাংকিং খাতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সেই সঙ্গে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণ বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে পড়েছে। ফলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারণ।

খেলাপি ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা সেপ্টেম্বর ’১৭ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও নতুন করে যুক্ত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। মোট ঘাটতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ। এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা; যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।

আলোচিত সময়ে সাত ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি তিন হাজার ৪২১ কোটি ৫৪ লাখ, সোনালী ব্যাংকের দুই হাজার ৯০০ কোটি ৯১ লাখ, রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ২৪৫ কোটি ৩৪ লাখ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১৯৮ কোটি ৬২ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৮৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।

নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আউয়াল খান জাগো নিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। এ ছাড়া পুনর্গঠন করা ঋণগুলো আবারও খেলাপি হয়েছে। খেলাপি না কমলে প্রভিশন ঘাটতি কমানো সম্ভব না। তাই খেলাপি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এর ফলাফল পাবো।

আলোচিত সময়ে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত (উদ্বৃত্ত) অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে জুন প্রান্তিকের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ১৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বেড়েছে। জুন প্রান্তিকের ঘাটতি ছিল ছয় হাজার ১৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এক দিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত ঋণগুলো ঠিক মতো আদায় হচ্ছে না। ফলে প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। এটি বেশি বাড়ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। কারণ, তাদের জবাবদিহিতা কম। তাই সরকারের উচিত এসব ব্যাংককে ‘সার্পোট’ না দিয়ে ঋণ আদায়ের ওপর চাপ দেয়ার পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণে কঠোর হওয়া। একই সঙ্গে যেসব বেসরকারি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে সেসব ব্যাংকের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ হঠাৎ করে বাড়েনি। এটা দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ একটি গুরুতর সমস্যা। তাই খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ সচেতন আছে। আগামীতে এটি কমে আসবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪৬ হাজার ৩১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৬৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৪৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

এসআই/এনএফ/এমএস

আরও পড়ুন