এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ১০ লাখ
দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছাতে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাব খুলেছেন ১০ লাখ ৩৮ হাজার গ্রাহক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সেখানে ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং, যা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। এসব হিসাবে জমাকৃত অর্থের স্থিতি ছিল ৭৯২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গত জুনে গ্রাহক ছিল ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৫ জন এবং জমাকৃত অর্থের স্থিতি ছিল ৬৫১ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাব বেড়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার এবং স্থিতি বেড়েছে ১৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ১৫টি এবং আউটলেট সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৫টি দাঁড়ায়। আলোচিত সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। এ সময়ে রেমিট্যান্স বিতরণ হয় ৯০২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আশানুরূপ সারা পাওয়া যাচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং করার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগিয়েছি। আমাদের এজেন্টরা গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় আমরা শাখা না বাড়িয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া।
নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং করার সুযোগ দেয়া হলেও পরের বছর নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর সুযোগ দেয়া হয়। তবে মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় না করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আগের মতোই বহাল রাখা হয়।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ চারবার ২৪ লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ দুটি লেনদেনে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে পরবেন। সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ দুবার আট লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা করে দুইটি লেনদেনে ছয় লাখ টাকা উত্তোলন করতে পরবেন। তবে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উত্তোলনসীমা প্রযোজ্য হয় না। দিনে দুবার জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রতি এজেন্টকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব থাকতে হয়।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সর্বপ্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে ১৩টি ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, নতুন প্রজন্মের মধুমতি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এছাড়া এবি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড শিগগিরই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কাজ শুরু করবে।
এসআই/জেডএ/বিএ