ব্যাংক এজেন্ট যাচাই-বাছাইয়ে সতর্কতার পরামর্শ
সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এ সেবা গ্রহণকারী গ্রামের সাধারণ মানুষ যেন কোনোপ্রকার প্রতারণার শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত এজেন্টদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকে এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত কর্মশালায় সোমবার এসব পরামর্শ দেওয়া হয়। কর্মশালার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নীতিমালার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রহিম, ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর, উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্মপরিচালক এ এইচ এম রফিকুল ইসলাম, পারওয়েজ আনজাম মুনিরসহ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জড়িত বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌছাতে হবে। যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা নেই সেই সব এলাকাকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। যাতে করে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সুবিধা পায়। এজন্য শহরের তুলনায় গ্রামকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এজেন্ট নির্বাচনে বেশকিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ঋণ খেলাপি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান, দেওলিয়া বা আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান যেন কোনোমতেই এজেন্ট না হতে পারে সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এজেন্ট দেওয়া যাবে না বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতে ২০১০ সালে চালু হয় মোবাইল ব্যাংকিং। এই সেবার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এজেন্ট ব্যাংকিং ধারণার সূত্রপাত ঘটায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। দেশে বর্তমানে ১৮ টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে ১৩টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকে ২ হাজারেও বেশি এজেন্ট রয়েছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং করার সুযোগ দেওয়া হলেও পরের বছর নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর সুযোগ দেওয়া হয়। তবে মেট্রোপলিটন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় না করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আগের মতোই বহাল রাখা হয়।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একবারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জমা অথবা তোলা যায়। তবে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উত্তোলন সীমা প্রযোজ্য হয় না। দিনে দুবার জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রতি এজেন্টকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব থাকতে হয়।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যেসব সেবা পাওয়া যায় : এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সকলপ্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়।
এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এ ছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।
এসআই/একে/আইআই