পেঁয়াজের লাগাম টানতে কাল বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। গত বছরের একই সময় প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২০-৩৫ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮৫ টাকা। অর্থাৎ এ বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৩ শতাংশ। ফলে নুন আনতে পানতা ফুরানো অবস্থা সাধারণ মানুষের।
এদিকে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় উদ্বিগ্ন সরকারও। তাই পেঁয়াজের লাগাম টানতে জরুরিভিত্তিতে কাল সোমবার বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসুর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা কর্মকর্তা লোকমান হোসেন, উপ-ঊর্ধ্ব কার্যনির্বাহী মো. আবুল হাসনাত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরাক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক অঞ্জন কুমার বড়ুয়া, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. শফিউল হক, ড. অনিমা রাণী নাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাঈল প্রমুখ। বৈঠকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা, যা আজ রোববার বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা। আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। এ ক্ষেত্রে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৯ অক্টোবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২০-২৮ টাকা। সে অনুযায়ী এক বছরের ব্যাবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৫৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আমদানি ও দেশি পেঁয়াজে গড়ে এ বছরে দাম বেড়েছে ১৬৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু বলেন, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। গত কোরবানি ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেলেও সরকারি পদক্ষেপের কারণে মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসে। তবে আবার তা বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য করণীয় ঠিক করতে সোমবার দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভাটি প্রতি মাসেই অনুষ্ঠিত হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা, ঋণ সুবিধা এবং এলসি সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপরও ঠিক কি কারণে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে সে ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, দেড়মাস পরে বাজারে আসবে নতুন পেঁয়াজ। তাই এ মুহূর্তে দাম বাড়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। সাধারণত এ সময়ে মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হয়। বাজারে দেশীয় জাতীয় ভালমানের পেঁয়াজেরও ঘাটতি নেই। এরপরও দাম বাড়ছে হু হু করে। তাই পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে মজুদকারী, আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকল মালিকদের মতো পেঁয়াজের আড়ৎ, মোকাম এবং মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে দাম কমতে পারে।
জানতে চাইলে বাণিজ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার নিয়ে সরকারের কাছে যে রিপোর্ট রয়েছে, তাতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের অপকৌশলের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। তাই ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং হওয়া উচিত। এছাড়া দাম বাড়ার পেছনে যারা দায়ী তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাবদ ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ২০-৩০ টাকা। অথচ রাজধানীর বাজারে এ পণ্যটি দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে একটি সংঘবন্ধ চক্র জড়িত। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে দাম বাড়ানো হচ্ছে না কিনা সেটাও খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। তবে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পেঁয়াজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এছাড়া রমজান ও কোরবানিতে পেঁয়াজের দেড় থেকে ২ লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠে সিন্ডিকেট চক্র।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসেবে দেখা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৯-২০ লাখ টন। তবে বছরে ১৯ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করতে হয়।
এমইউএইচ/এএইচ/জেআইএম