রিজার্ভ চুরির অনাদায়ী অর্থ আরসিবিসির কাছে চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক
সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া রিজার্ভের অনাদায়ী অর্থ ফিলিপাইনের বাণিজ্যিক ব্যাংক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) কাছে চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার রিজার্ভ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া, এ সম্পর্কিত বিভিন্ন পক্ষের কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরে এ তথ্য জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের বিভ্রান্তি পরিহারের লক্ষ্যে রোববার এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, রিজার্ভ চুরির পাচার হওয়া অর্থের অবশিষ্ট ৬৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫২৮ কোটি টাকা) উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়ায় চলছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পর যে পরিমাণ অর্থ অনাদায়ী থাকবে তা আরসিবিসি ব্যাংকের কাছ থেকে আদায়ে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ফিলিপাইন সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় আইনি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ দ্রুত ফেরত পাওয়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা চলমান।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন। এখনও অনাদায়ী ৬৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার। এ অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় ফিলিপাইন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
এছাড়া অবশিষ্ট অংশ দ্রুত উদ্ধার এবং তা ফেরত আনতে বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম ফিলিপাইনে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে, ক্যাসিনোতে যে ২৯ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরিত হয় তা ফিলিপাইনের আদালতে ফ্রিজ করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং-এর দুইজন কর্মচারীর হিসাবে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ অর্থ আদালতের আদেশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট হিসাব হতে কোনো পক্ষই উত্তোলন করতে পারবে না। এ পরিমাণ অর্থ বাজেয়াপ্তকরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত প্রদানের বিষয়টি ম্যানিলার রিজিওনাল কোর্টে বিচারাধীন।
ব্যাংক আরও বলেছে, পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানি রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেমের নিকট ১৭ মিলিয়ন ডলার রক্ষিত রয়েছে। এ অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের এন্ট্রি মানি লন্ড্রারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব হতে অর্থ চুরির বিষয়ে আরসিবিসি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে ওই ব্যাংকের দায় রয়েছে।
উল্লেখ, গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি করা হয়। চুরির প্রায় ১০ কোটি ডলারের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ রিজল ব্যাংকের একটি শাখা হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়।
অর্থ উদ্ধারে সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সুইফটের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভার সূত্রে একটি ত্রিপক্ষীয় স্টেটমেন্ট জারি করা হয়। যাতে বাংলাদেশের চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক, এপিজি, এগমন্ট গ্রুপ, ইন্টারপুলসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
এসআই/জেডএ/জেআইএম