নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে
নিরাপদ ও স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্য উৎপাদনে জৈবসার, বালাইনাশক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। এটি নিশ্চিতে কৃষি ও কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ ও ভর্তুকি বাড়াতে হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে খাদ্য ‘নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক সেমিনারে কৃষক, গবেষক ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ কথা বলেন।
বিসেফ ফাউন্ডেশন ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) সভাপতি কৃষি বিজ্ঞানী জয়নুল আবেদীনের পরিচালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় হুইপ ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর, বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েছ কবির, অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেনসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষক ও কৃষিখাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবান্ধব নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষককে কম মূল্যে কৃষি উপকরণ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাদি ও মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে কৃষিশিল্পে বিনিয়োগ ও ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। তবে এখন পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষে্যই কাজ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কম সুদে কৃষকদের ঋণ দিতে তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও সেই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ১৫-২০ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে। এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কৃষি গবেষক ও এ খাত সংশ্লিষ্টরা কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে কোম্পানি আইনে যেসব ধারা বাধাগ্রস্ত করে তা পরিবর্তনসহ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ বাস্তবায়নের দাবি জানান। একই সঙ্গে জৈবসার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন।
তারা বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন ও খাবার টেবিল পর্যন্ত স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আর এসব মান নিশ্চিতে যে অর্থ ব্যয় বাড়বে তা সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে।
সেমিনারে আগত কৃষকরা বলেন, এখন সার বেশি দেয়ার পরও উৎপাদন ঠিকমতো হচ্ছে না। জমির উর্বরতা কমে গেছে। আর জৈবসার ব্যবহারে খরচ বেশি হওয়ায় তা কম ব্যবহার করা হয়। তাই একদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে অন্যদিকে ভালো বাজার ব্যবস্থা না থাকায় তেমন মূল্য মিলছে না। ফলে সব সময় লোকসানে পড়ছে কৃষকরা।
তারা আরও বলেন, কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পায় না। বেশি সুদে ঋণ নিয়ে কৃষিকাজ করতে হয়। ফলে সব সময় আমরা পিছিয়ে থাকি। তাই কৃষককে বাঁচাতে নিরাপদ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ খাদ্য নিশ্চিত করতে কৃষি খাতে কম সুদে ঋণ ও আধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারসহ জৈবসারে ভর্তুকি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকরা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন ধারার নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম। প্রবন্ধে জৈব কৃষি নীতি ২০১৬ যুগোপযোগী করে বাস্তবায়ন, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ বাস্তবায়ন ও বিএসটিআইয়ের আদলে সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান করাসহ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
এসআই/এএইচ/এমএস