বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণখেলাপি জিএম বরখাস্ত
একাধিক ব্যাংকে খেলাপি হওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রভাষ চন্দ্র মল্লিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের এক নির্দেশনার মাধ্যমে তাকে বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম প্রভাষ চন্দ্র মল্লিকের ১১ ব্যাংকের ঋণখেলাপির তালিকায় নাম রয়েছে। ব্যাংকগুলো ঋণের টাকা ফেরত চাইলে পরিশোধ না করে উল্টো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধমক দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা নন, প্রভাষের পেছনে ঘুরছেন তার সহকর্মীরাও। নানান কৌশলে সহকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না তিনি। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিএম প্রভাষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আদেশে বলা হয়েছে, ‘বগুড়া অফিসে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিককে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩ এর ৪৫(৫) ধারার আওতায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি অত্র ব্যাংকের প্রচলিত বিধি মোতাবেক জীবিকা নির্বাহ ভাতা প্রাপ্য হবেন।’
নিয়ম অনুযায়ী, পূর্বানুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। তবে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক অনুমোদন ছাড়াই ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছেন।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জুলাই শেষে ১৫টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রভাষ মল্লিকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১১টি ব্যাংকের ৫৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৬ টাকা এখন কু-ঋণে পরিণত হয়েছে। এসব ঋণের বেশিরভাগই নিয়েছেন বেতনের বিপরীতে ক্রেডিট কার্ড বা ব্যক্তিগত ঋণ হিসেবে।
এছাড়া তার ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে অন্য একজনের নামে আরও এক লাখ ৮৬ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে। মন্দমানে শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে তিন দফায় নেয়া দুই লাখ ৩০ হাজার, চার লাখ ৬০ হাজার ও দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা। পূবালী ব্যাংক থেকে দুই দফায় নেয়া তিন লাখ ৮১ হাজার টাকা। একই ব্যাংক থেকে নেয়া এক লাখ ১৪ হাজার টাকার অন্য একটি ঋণ সন্দেহজনক মানের খেলাপি।
প্রাইম ব্যাংকের ছয় লাখ ৪৯ হাজার টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ছয় লাখ ১৮ হাজার, ন্যাশনাল ব্যাংকের পাঁচ লাখ আট হাজার, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের তিন লাখ ২০ হাজার, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের দুই লাখ ৫৭ হাজার, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুই লাখ ২৩ হাজার এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের এক লাখ ৪১ হাজার টাকা এখন মন্দমানের খেলাপি।
কিছুদিন আগে ইস্টার্ন ব্যাংকে প্রভাষ ১০ লাখ টাকার বেশি পরিমাণের ঋণখেলাপি ছিলেন। তবে সম্প্রতি কিছু টাকা দিয়ে পুনঃতফসিল করায় তা কমে আট লাখ ৯৩ হাজার টাকায় নেমেছে। এ ঋণ এখন নিয়মিত হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া সিটি ব্যাংকে তিনটি ঋণের মধ্যে চার লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি ঋণ এখন সন্দেহজনক মানের খেলাপি।
আর এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা নিম্নমান এবং এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা ঋণের তিনি গ্যারান্টার। এছাড়া এনসিসি ব্যাংকের চার লাখ ৫৬ হাজার ও মেঘনা ব্যাংকের এক লাখ ১৪ হাজার টাকা সন্দেহজনক মানের খেলাপি। আর এবি ব্যাংকে সাত লাখ ৬১ হাজার, উত্তরা ফাইন্যান্সের সাত লাখ ৫০ হাজার এবং অপর একটি ব্যাংকের পাঁচ লাখ টাকা নিয়মিত রয়েছে।
এসআই/বিএ