ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

৭ ব্যাংককে জরিমানার পর শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৭

শেয়ারবাজারের নিয়ম ভেঙে বিনিয়োগ করাসহ বিভিন্ন অসঙ্গতির দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সাত ব্যাংককে জরিমানা করায় দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া সবকটি ব্যাংকের দরপতন হয়েছে। একই অবস্থা দেখা গেছে, অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া মাত্র একটি ব্যাংকের শেয়ার দাম বেড়েছে।

রোববার একটি সরকারি ও ৬টি বেসরকারি ব্যাংককে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে নির্ধারিত সীমার থেকে বেশি বিনিয়োগ করেছে। সেই সঙ্গে বাড়তি বিনিয়োগের তথ্য গোপন করেছে।

জরিমানার শিকার হওয়া ওই সাত ব্যাংকের বাইরে আরও আটটি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে বিশেষ পরিদর্শন চালিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদেরও জরিমানার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর নাম জানায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া সন্দেহমূলক লেনদেন পরিলক্ষিত হওয়ায় আরও সাতটি ব্যাংকের বিনিয়োগ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২২টি ব্যাংককে কঠোর তদারকির আওতায় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অপরাধের ধরন অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ মাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়ি পড়ে। ফলে সোমবার ব্যাংক কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি আর্থিক খাতসহ অন্য খাতেও লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে।

এতে উভয় বাজারে মূল্য সূচকের বড় পতন হয়ছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৬ পয়েন্ট এবং সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স কমেছে ১৩২ পয়েন্ট।

মূল্য সূচকের পতনের সঙ্গে উভয় বাজারে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কমেছে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একাধিক ব্যাংককে জরিমানা করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়ি পড়ে। যার প্রভাবেই শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সার্বিক বাজারের জন্য ভালো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাত ব্যাংককে জরিমানা করা এবং টানা বাড়ার কারণেই সোমবারে দরপতন হয়েছে। তবে এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাজারের অবস্থা ২০১০ সালের মতো হবে না। কারণে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার কম।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার স্বাভাবিক বাড়লে সেটাই ভালো। ব্যাংকের টাকায় শেয়ারবাজার বাড়া ভালো না। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ভালো হয়েছে। বাজার আরও উঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিলে তাতে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়তো। বর্তমানে বাজার যে অবস্থায় আছে তাতে বাজারে সহজে আতঙ্ক ছড়াবে না। কারণে এখন শেয়ার প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং বড় বিনিয়োগকারীদের হাতে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েদিন ধরে উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বৃদ্ধি পায়। তবে রোববার লেনদেনের শেষ দিকে এসে প্রকৌশল, বীমা, বস্ত্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ এই খাতগুলোর পাশাপাশি ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোরও দরপতন হয়।

সাত ব্যাংককে জরিমানা করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সোমবার সেই দরপতন আরও বেগবান হয়। রোববার ডিএসইতে লেনদেন হওয় ৬টি ব্যাংকের দাম বাড়লেও, সোমবার দাম বাড়ার তালিকায় একটি ব্যাংকও স্থান করে নিতে পারেনি। আর আর্থিক খাতের মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন দরপতনের কারণে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুটি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়া সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় কমেছে। অপরদিকে দাম বেড়েছে ৯২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির দাম। লেনদেন হয়েছে ৯৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৫৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংকের ৩১ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আমরা নেটওয়ার্ক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ১৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫২৩ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৭০টির দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১৫৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির দাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের পর ৩৬টি ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে চলে যায়। ওই আইনে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য তিন বছর সময় দেয়া ছিল। সে অনুযায়ী গত ২১ জুলাইয়ের মধ্যে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করার কথা। নির্ধারিত সময়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনলেও ১৩টি ব্যাংক নামাতে ব্যর্থ হয়

তবে ১৩ ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমার ওপরে থাকায় তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও ব্যাংকের শেয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধনে রূপান্তর করে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়ে সুযোগ পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো এবি, আইএফআইসি, জনতা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, ওয়ান, পূবালী, সাউথইস্ট, শাহজালাল ইসলামী, দ্য সিটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ও প্রিমিয়ার।

এমএএস/এমআরএম/জেআইএম

আরও পড়ুন