মৃত শ্রমিকের বীমা নিয়ে টালবাহানা : পদ্মা লাইফকে শোকজ
বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানার মৃত ১৫৫ শ্রমিকের বীমার টাকা পরিশোধ না করে টালবাহানা করায় পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে শোকজ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
জানা গেছে, বাংলাদেশ নিটওয়্যার মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্যভুক্ত কারখানার মৃত এসব শ্রমিকের পরিবারকে বীমা দাবির টাকা আদায় করে দিতে দুই বছর ধরে পদ্মা লাইফে একাধিকবার ধরনা দিয়েছে বিকেএমইএ। কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় গত ১৮ জুলাই বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করে বিকেএমইএ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আইডিআরএ থেকে পদ্মা ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে শোকজের চিঠি ইস্যু করা হয়।
আইডিআরএ’র পরিচালক কামরুল হক মারুফের সই করা ওই চিঠিতে ১৫৫ শ্রমিকের মৃত্যু দাবির বিপরীতে বীমা অংকের টাকা সুদসহ পরিশোধ করতে পদ্মা লাইফকে আদেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আইডিআরএতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
বিকেএমইএ’র অভিযোগ থেকে জানা যায়, মৃত শ্রমিকদের দাবি উত্থাপন করা হলেই নানা ধরনের অবান্তর, অযৌক্তিক ও বেআইনি প্রশ্ন তুলে ব্যাখ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে হয়রানি করেছে পদ্মা ইসলামী লাইফ। দাবি নিষ্পত্তি না করে অসৎ উদ্দেশ্যে ঝুলিয়ে রেখে গ্রাহকের প্রাপ্য টাকা না দেয়ার পাঁয়তারা করছে।
অথচ মৃত শ্রমিকের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিকভাবে সুবিধা দিতেই গ্রুপ বীমার এ চুক্তি করা হয়েছে। বীমা কোম্পানিটির অসহযোগিতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনও কোনো টাকা পায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে বীমা চুক্তির মাধ্যমে বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত সব ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জীবন গ্রুপ বীমার আওতাভুক্ত হয়, যা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর। এরপর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আরেকটি চুক্তি করা হয়, যা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর।
উভয় বীমা চুক্তির শর্ত অনুসারে, বিকেএইএ’র প্রতিটি সদস্য কারখানার জন্য বছরে সর্বোচ্চ ২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু দাবি পরিশোধযোগ্য। এ ক্ষেত্রে যেকোনো সদস্যের যেকোনো প্রকার মৃত্যুতে ২ লাখ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও একই সুবিধা প্রদান করা হবে। তবে ঘোষিত বা অঘোষিত যুদ্ধ এবং আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুকে বীমার আওতার বাইরে রাখা হয়।
যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত নিটওয়ার ফ্যাক্টরির অধীনে পূর্ণকালীন চাকরিতে নিয়োজিত, সুস্থ এবং যাদের বয়স পরবর্তী জন্মদিনে ৬০ বছর উত্তীর্ণ হবে কেবল তাদের জীবন এই চুক্তিনামার আওতাভুক্ত রাখা হয়। তবে কোনো সদস্যের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চুক্তিনামার আওতায় আসবে না বলে বীমা চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
২০১৫ সালের বীমা চুক্তিতে প্রতি সদস্যের বীমাকৃত অর্থের হাজার প্রতি বার্ষিক প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করা হয় ৮ টাকা ৭৫ পয়সা এবং প্রতি ইউনিটের বার্ষিক প্রিমিয়াম ৩৫ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৪ সালের চুক্তিতে বীমাকৃত অর্থের প্রতি হাজার টাকার জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ৬ টাকা ২৫ পয়সা হারে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ফ্যাক্টরির জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় ২৫ হাজার টাকা। কোনো ফ্যাক্টরির সদস্যদের তালিকা সরবরাহের পর প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রক্রিয়ার জন্য বিকেএমইএ-কে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় দেয়া হয়।
বীমা চুক্তির শর্ত অনুসারে, বিকেএমইএ’র সদস্য কারখানায় চাকরিরত কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে সে শ্রমিক বীমা দাবি পাবে। এ ক্ষেত্রে পদ্মা ইসলামী লাইফের কাছে জমা করা সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিক তালিকায় মৃত শ্রমিকের নাম থাকা বাধ্যতামূলক। সকল মৃত্যু দাবি উত্থাপন করার পর ১৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করা হবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার ১৫৫ শ্রমিকের মৃত্যু দাবি উত্থাপিত হলে দাবির টাকা পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা করতে থাকে পদ্মা লাইফ। ফলে দাবির টাকা আদায়ে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র শরণাপন্ন হয় বিকেএমইএ।
এমএএস/আরএস/এমএস