ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

রমজানে বেশি বিক্রি হয় খেজুর

প্রকাশিত: ০৩:১৮ এএম, ১৫ জুন ২০১৫

বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার রাতে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে শুক্রবার পবিত্র রমজান শুরু হবে। এক মাসব্যাপী মুসলিম বিশ্ব পালন করবে রোজা। সারা দিন রোজা রেখে মানুষ সন্ধ্যায় বসে ইফতার গ্রহণ করে। রোজার দিনগুলোতে মানুষের খাদ্য তালিকায় আসে পরিবর্তন। সারাদিন রোজা শেষে বাংলাদেশের মানুষ চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী ইফতার করে বিভিন্ন ধরণের তৈলাক্ত দ্রব্য পেয়াজু, বেগুণী, বিভিন্ন ধরণের চপসহ নানান ফল-ফলাদি দিয়ে।

তবে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সমাজের মানুষের ইফতারের খাদ্য তালিকার পার্থক্য লক্ষ করা গেলেও উভয় শ্রেণির মানুষের ফলের তালিকায় খেজুর থাকবেই। খেজুর ছাড়া ইফতার যেন পূর্ণতা পায়না।

ইসলাম ধর্মে প্রথাগত ও বৈজ্ঞানিক কারণে খেজুর ইফতারে থাকবেই। বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মের প্রথাকে গুরুত্ব দিয়ে ফলের তালিকায় খেজুর রাখে। বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিস অনুযায়ী, রাসুল (সা.) ইফতার করতেন খেজুর ও পানি দিয়ে। নবীজী যে খেজুর খেতেন তার নাম ছিল- ‘আজোয়া’। যার প্রতি কেজি খেজুরের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় বিশ হাজার টাকা। তাছাড়া এ খেজুরে রয়েছে ওষধিগুণ। ‘আজোয়া’ খেজুর বাংলাদেশে পাওয়া না গেলেও অনেকে এর নাম জানে না। অনেক উচ্চবিত্ত পরিবার সৌদি আরব থেকে এটি নিয়ে আসেন।  সাধারণত এ খেজুর মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে বেশি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজ নবীজীর (সা.) খাদ্য হিসেবে খেজুর খেতেন, তাই তারা ইফতারের খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখেন বলে জানান আমিম ইহসান।

এসব কারণে রমজানে দেশের বাজারে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। বাজারে চাহিদা বেশি থাকার কারণে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি করে খেজুর আমদানি করতে হয় বলে জানান বাদামতলীর কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী। এতে খেজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গত কয়েক বছরের খেজুরের দাম বৃদ্ধির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে এ দাম বৃদ্ধিতে আমদানিকারদের হাত নেই বলে জানান কয়েকজন আমদানিকারক। তারা দাবি করেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে থাকেন। সারা দেশে বছরে যে পরিমাণ খেজুর কেনা-বেচা হয় তার সিংহ ভাগ (প্রায় ৯০ শতাংশ) রমজান মাসেই হয়।  

বাদামতলী ফল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত কর্মচারী আড়তদারদের। চরম বেচা-কেনা চলছে খেজুরের। কারো সঙ্গে কথা বলার ও ফুসরত নেই।  

দেশের বৃহত্তম ও পুরাতন পাইকারি বাজার এ বাদামতলী। সাধারণত বাদামতলী ফলের আড়ৎ নামেই দেশব্যাপী বেশি পরিচিত। এখান থেকে সারা দেশে আমদানিকৃত ফল সরবরাহ করা হয়ে থাকে বলে জানান কয়েকজন ফল কিনতে আসা মাঝারি মানের পাইকারি বিক্রেতা।

টঙ্গী থেকে আসা বাদশা মিয়া জানান, সারা দেশ থেকে তার মতো অধিকাংশ ফল বিক্রেতা এখান থেকেই ফল কিনে থাকেন। কি ফল কিনবেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এখানে খেজুর কিনতে এসেছি। আমি এখান থেকে কয়েক বস্তা খেজুর কিনব।

বাদামতলী বাজারে যে সকল খেজুর পাওয়া যায়– দাবাশ, ফরিদা, মরিয়স, রেজিশ, বড়ই, নাগাল ব্রাউন, নাগাল তেরে, বাংলা খেজুর (বস্তা খেজুর) বা জাহেদি খেজুর ও তিউনিশিয়ান খেজুর।

বাদামতলীর আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, ইরাক ও ইরান থেকে খেজুর আমাদানি করা হয়। তবে বেশি আমদানি করা হয় সংযুক্ত আমিরাত থেকে। কারণ হিসেবে বাদামীতলী পাইকারি আড়তের ‘বন্ধু ফ্রুটসের’ ব্যবস্থাপক জসিম মোল্লা জানান, খেজুর মূলত আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই বেশি আমদানি করি। সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য থেকে খেজুর সংগ্রহ করে আমাদের কাছে সরবরাহ করে থাকে।

বাদামতলীতে প্রায় একশ’ প্রকার খেজুর পাওয়া যায়। তবে মজার ব্যাপার হলো, এক ধরণের খেজুর অন্য প্যাকেটে ভরা হলে নতুন ধরণের নামকরণ করা হয় বলে জানান বাদামতলীর পাইকারি বিক্রেতা অজয় সরকার। তিনি  জানান, বাজারে খেজুরের প্রকারভেদ বহু বলা হলেও আসলে বাদামতলী বাজারে ২০ প্রকারের বেশি খেজুর নেই।

‘সাথী ফ্রেস ফ্রুট’ -এ গিয়ে খেজুরের দাম সর্ম্পকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক দীলিপ কুমার শীল জানান, বাজারে বিভিন্ন দামের খেজুর পাওয়া যায়, তবে সবচেয়ে ভাল মানের খেজুর সৌদি ও তিউনিশিয়ার। এদের দামও বেশি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি কেজি দাবাশ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি তিউনিশিয়া ২০০ টাকা, বস্তা প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, নাগাল ব্রাউন প্রতি ১০ কেজি ১৪৫০ টাকা, দারাশ প্রতি ২৫ কেজি ২২০০ টাকা, বারিআরি প্রতি ১২ কেজি ২৬০০ টাকায় ও রেজিশ প্রতি ১২ কেজি ১১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দিলীপ আরো জানান, দোকান ভেদে প্রতিকেজি খেজুরের মূল্য ২ থেকে ৩ টাকা কম-বেশি হতে পারে।

নাসের এন্টারপ্রাইজে গিয়ে কথা বলে জানা গেছে, ফরিদা প্রতি ৫ কেজি খেজুর ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায়, মরিয়ম প্রতি ১০ কেজি ১২০০ টাকায়, রেজিশ প্রতি ১০ কেজি ১১০০ টাকায়, নাগাল তেরে প্রতি ৬ কেজি ১৩০০ টাকায় বিক্র হচ্ছে।

মদিনা ফ্রুটস, বায়োজীদ ফ্রুটস এজেন্সি বায়ো ও মেসার্স আবির ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায় প্রায় একই চিত্র। তবে আড়তের দোকান ভেদে প্যাকেটে খেজুরের পরিমাণ পার্থক্য দেখা যায়, দামের পার্থক্যও দেখা যায়।

দাম কম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোরেই মাঝারি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বাদামতলীর ফল বিক্রয়ের আড়তে এসে ভিড় জমান। পাশাপশি দক্ষিণবঙ্গের পরিবহণ ব্যবস্থা সুবিধার জন্য দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা এসে ভিড় জমান। এ আড়তে ছোট বড় মিলে ২০০ পাইকারি  বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। এছাড়া রয়েছে ৫০ এর মত আমদানিকারক। রয়েছে ১০ হাজারের মত কর্মচারী।

খেজুরের সার্বিক বাজার সম্পের্কে জানতে চাইলে ‘ঢাকা মহানগর ফল আমদানিকারক-রফতানিকারক ও আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকার ফল বিক্রি করে থাকি। তবে রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। আমরাও বেশি খেজুর আমদানি করে থাকি। বছরের প্রায় সিংহভাগ খেজুর এ রমজানেই বিক্রি হয়ে থাকে ।
 
ফলে ভেজাল ও ফরমালিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- দেখুন আমরা মুসলমান, আমরা খাদ্যে ভেজাল মেশাই না। ফরমালিন নামক বস্তুটি কতিপয় দুর্নীতিপ্রবণ কর্মকর্তারা কৌশলে নিজেদের মিডিয়ায় ফোকাস করার জন্য একটি হিউমার ছড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যেখানে প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকার ফল এ বাজার থেকে বিক্রি হয়। সে পরিমাণ ফলে ফরমালিন মেশাতে কি পরিমাণ লোকবল বা জায়গার প্রয়োজন তা আপনার সহজেই  অনুমান করেন। ফরমালিন শুধুমাত্র প্রোটিনেই কার্যকর হয় বলে জানান তিনি। ফলে এটি কোন কাজ করে না।

খুচরা বিক্রেতারা খাদ্যে ফরমালিন মেশান কিনা তা জানতে তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন ফল বিক্রি করে আবার নতুন করে ফল আনি। আমরা তো প্রতিদিন খুচরা বিক্রেতাদের কাছেই ফল বিক্রি করি। ফল প্রতিদিন বিক্রি না হলে তো তাদের কাছে ফল বিক্রি করতে পারতাম না।   

এসএম/এসএইচএস/এসকেডি/এআরএস/এমএস