ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন মানছে না ডিএসই

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৮:২৪ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (প্রশাসন থেকে মালিকানা পৃথকীকরণ) সুফল পাচ্ছেন না প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উল্টো ডিএসই প্রতিষ্ঠানটির ২০১০ সালের বেতন কাঠামো ভেঙে দিয়ে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনটি ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও বেতনভাতা বাড়ানোর বিষয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে।

ডিএসইর চলতি অর্থবছরের প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির কর পরবর্তী প্রকৃত মনুাফা হয়েছে ১২০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় দাঁড়ায় ৬৭ পয়সা। আর ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ১১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি আয় দাঁড়াবে ৬৬ পয়সা। প্রস্তাবিত এই বাজেটে প্রতিষ্ঠানটি ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম মুনাফার প্রাক্কলন করেছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার নিকুঞ্জে নির্মিতব্য ভবনটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে। নিকুঞ্জের এই ভবনের জন্য বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালে ভবনটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর ২০১৮ সালে তা ১৪২ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ভবনটির জন্য ১৪২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়ানো হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসইতে ২০১০ সালের প্রবর্তিত বেতন কাঠামো দিয়েই এতদিন চলে আসছিল। কিন্তু গত মে মাসে সর্বশেষ বেতন কাঠামো সংশোধন করা হয়। কিন্তু পদোন্নতি দেয়া হয়নি। প্রচলিত বেতন কাঠামো রাখা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কর্মকর্তারা গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ইনক্রিমেন্টসহ যাবতীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসই’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছি। আশা করেছিলাম ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর আমাদের ভাগ্যের উন্নতি হবে কিন্তু উল্টোটি হলো। এখন পদোন্নতি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ নতুন করে পদোন্নতি চালু হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছি।

ডিএসই’র নির্ভরশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের ৮৬২তম সভায় স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সেখানে কর্মরত প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক বেতনের ১৫ শতাংশ ১ মে থেকে বাড়ানোর সুপারিশ অনুমোদিত হয়। অধিকন্তু আরও ১৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ্যতার ভিত্তিতে ৩১ মের মধ্যে বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়। সেখানে আরও বলা হয়, মানবসম্পদ বিভাগ যোগ্যতার মাপকাঠিতে এ বেতন কীভাবে বাড়ানো যায় সেটি পর্যালোচনার ভিত্তিতে সম্পন্ন করবে।

ডিএসই’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএসইতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৭০ জন। এর মধ্যে ৭০ জনের বেতন ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বাকি কয়েকজনের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অধিকাংশকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করলেও ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সেটি অগ্রাহ্য করছে। অর্থাৎ তাদের মতে, ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ বর্ধিত বেতন পাওয়ার যোগ্য কেউই ছিল না।

অভিযোগ আছে, জুলাই মাসের বেতনে কারো ইনক্রিমেন্ট হয়নি। আদৌ হবে কি না, সেটিও কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। আগামী ২০১৯ সালের আগে আর বেতনভাতা বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলেও জানা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে কী আছে সেটি বড় বিষয় নয়। কারও তো বেতন কমানো হয়নি।

পদোন্নতি ও বেতনভাতা বাড়ানোর বিষয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, কার কতটুকু সক্ষমতা আছে, সেটি দেখার বিষয়। এটি তো একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান তো নিজেদের বাঁচিয়ে তারপর সবকিছু করবে। এখানে সমস্যা কোথায়?

তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে যাই থাকুক, প্রতিষ্ঠান চাইলে যেকোনো বিষয় পরিবর্তন করতে পারে। আজ যদি এই মার্কেট না টেকে, আমাদের যদি আয় না থাকে, তাহলে বেতন দেব কীভাবে?

নিকুঞ্জ ভবনের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নিকুঞ্জ ভবনের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এত টাকা এই বিল্ডিংয়ের জন্য খরচ হবে কেন? আগেই বিল্ডিংয়ের জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেই টাকাই তো খরচ হয়নি। এখন আবার কেন বিল্ডিংয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হবে? বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

এমএএস/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন