মূলধন সংকটে সমতা লেদার
পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত চামড়া খাতের প্রতিষ্ঠান সমতা লেদার এখনও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা কার্যকরী মূলধন সংকটে ভুগছে। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ জুলাইও ডিএসই থেকে জানানো হয়, সমতা লেদার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটে ভুগছে। এরপরও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম।
সোমবার ডিএসই থেকে প্রকাশ করা তথ্যে জানানো হয়েছে, শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে গত ২৭ আগস্ট ডিএসই থেকে সমতা লেদারকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বড় ধরণের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটে ভুগছে।
তার আগে গত জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থেকে। ফলে ২৪ জুলাই ডিএসই থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। সেই নোটিশের জবাবেও সমদা লেদার কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল তারা বড় ধরণের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটে ভুগছে।
সমতা লেদার জানিয়েছে, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটের কারণে কোম্পানিটির পক্ষে আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ারও কোনো কারণ নেই।
এদিকে, চামড়া খাতের এই প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমতা লেদারের লোকসানের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেড়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে সম্পাদন মূল্য এবং পরিচালন নগদ প্রবাহের পরিমাণ।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সমতা লেদারের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ঋণাত্মক ৩ পয়সা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার প্রতি লোকসানে আছে ৩ পয়সা।
আগের বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ পয়সা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠান শেয়ার প্রতি লোকসান বেড়েছে ২ পয়সা।
প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭ পয়সা। যা ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ছিল ৪ পয়সা।
এদিকে, সমতা লেদানের নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) এবং নিট পরিচালন নগদ প্রবাহে (এনওসিপিএস) নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষে প্রতিষ্ঠানটর শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৬৯ পয়সা। যা ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ শেষে ছিল ১৪ টাকা ৭৯ পয়সা।
অপরদিকে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে সমতা লেদারের নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৪ পয়সা, যা ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ছিল ৮৫ পয়সা।
আর্থিক অবস্থা এমন নেতিবাচক হওয়ার পরও বেড়েই চলেছে সমতা লেদারের শেয়ারের দাম। মে মাসের ৯ তারিখ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম প্রায় একটানা বাড়ে। আর ১০ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বাড়ে অস্বাভাবিকভাবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুলাই ডিএসই থেকে তথ্য প্রকাশ করা হয় সমতা লেদার বড় ধরনের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটে ভুগছে। এরপর কিছুদিন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমতে থাকে। ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা দাম ওঠার পর আগস্টের প্রথম থেকে টানা কমে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৯ আগস্ট দাঁড়ায় ৩৯ টাকায়।
এরপর আবার অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে সমতা লেদানের শেয়ারের দাম। ২৭ আগস্ট লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ৬৩ টাকা ৭০ পয়সা। ডিএসই থেকে সতর্ক করার পরও সোমবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এ দিন লেনদেন শেষে সমতা লেদারের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা।
এমএএস/এসআর/আইআই