ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের ব্যাংকের এমডি নিয়োগ নয়
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্ভাব্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে প্রাথমিকভাবে ১১ জনের তালিকা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ তালিকায় দুজনের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি ৯ সদস্যের পদোন্নতি চূড়ান্ত করেছে এ-সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের কমিটি।
রোববার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমডি পদে পদোন্নতি বিবেচনা সংক্রান্ত সভায় এ ৯ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান।
সূত্র জানায়, এমডি পদে পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী ১১ সদস্যের তালিকা সভায় উপস্থাপিত হয়। তবে তালিকায় থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মিজানুর রহমান খান এবং জনতা ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুছ ছালাম আজাদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের দুজনকে বাদ দিয়ে ৯ সদস্যের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে আজকের বৈঠকেই তাদের এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে পদ খালি থাকা সাপেক্ষে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
এমডি পদে চূড়ান্ত সদস্যরা হলেন
জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. হেলালউদ্দীন, অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মো. ইসমাইল হোসেন, মো. রফিকুল আলম, মো. মশিউর আলী, আলী হোসেন প্রধানিয়া, সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি আমিন উদ্দিন আহমেদ, তারিকুল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি মাহতাব জাবিন এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডিএমডি মো. মুঈন উদ্দিন।
প্রাথমিকভাবে তৈরি ১১ সদস্যের তালিকায় আরও যে দুই ডিএমডি ছিলেন তারা হলেন অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মিজানুর রহমান খান ও জনতা ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুছ ছালাম আজাদ।
যে কারণে বাদ পড়লেন দুই ডিএমডি
তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মিজানুর রহমান খানকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জেলে ছিলেন তিনি। সেই কারণে তাকে বরখাস্তও করেছিল সরকার।
সূত্র জানায়, মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ‘বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন’। মুন গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় গত বছরের ৩০ জুন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইদিন দুপুরে মিজানুর রহমান খান ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পান। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তাকেও আটক করে দুদক। মিথ্যা তথ্যে মুন গ্রুপকে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়ায় মিজানুর রহমানসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই সময় মামলা করে দুদক। পরে ৭ আগস্ট মিজানুর রহমান খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে মন্ত্রণালয় সম্প্রতি মিজানুর রহমানের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে মামলা চলমান থাকায় তাকে কোথাও পদায়ন করা হয়নি। অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে ব্যাংকে ডিএমডি পদ খালি না থাকায় তিনি যোগদান করতে পারেননি। যদিও অগ্রণী ব্যাংক থেকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।
চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে জনতা ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুছ ছালাম আজাদকে। সূত্র জানায়, তিনি বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্ত, যদিও মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের মামলায় আসামি ছিলেন আব্দুছ ছালাম। মামলায় গ্রেফতার অভিযান শুরু হলে ছুটিতে বিদেশে চলে যান ছালাম। তাকে মামলার আসামি করা হলেও পরে চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেয়া হয়। মামলার পর ব্যাংকে তার দায়িত্ব পরিবর্তন করে মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে আবারও তাকে ঋণ বিভাগের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়।
এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র বলছে, যাদের বিরুদ্ধে ঋণ অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে কোনোভাবেই এত বড় দায়িত্বে দেয়া ঠিক হবে না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এমইউএইচ/বিএ/আরআইপি