ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সহজ হলো জীবন বীমার লভ্যাংশ ঘোষণা

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৭:৪৯ এএম, ২০ জুলাই ২০১৭

জীবন বীমা কোম্পানির অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের সাপ্লিমেন্টারি (সম্পূরক) গাইডলাইন সাময়িক স্থগিত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ফলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে ২০১৬ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা অনেক সহজ হলো।

এর আগে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল জীবন বীমা কোম্পানির অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের জন্য একটি সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইন জারি করে আইডিআরএ। ওই গাইডলাইনে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন নিট প্রিমিয়াম মেথডে করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন ও সুদের হার নিয়েও গাইডলাইনে কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।

গাইডলাইনে শর্ত রাখা হয়, বীমাগ্রহীতা থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা যাবে না এবং কোনো ধরনের বোনাস বা অন্য যেকোনো ধরনের চার্জ ধার্য (বীমাগ্রাহীতা থেকে সংগৃহীত অর্থ) এখন থেকে করা যাবে না। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা খাতে অতীতে যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে তাও সমন্বয় করতে হবে। ২০১৬ সালের হিসাবে কী পরিমাণ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় সমন্বয় করা হবে তা নির্ধারণ করবে অ্যাকচুয়ারি।

আইডিআরএ’র ওই গাইডলাইন জারির পর থেকে এর বিরোধিতা করা শুরু করে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর দাবি, গাইডলাইনে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে ভ্যালুয়েশন করলে সারপ্লাস (উদ্বৃত্ত) অর্থের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। আর উদ্বৃত্ত অর্থ কমে গেলে লভ্যাংশ ঘোষণায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ কোম্পানি উদ্বৃত্ত অর্থ থেকেই লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের সাপ্লিমেন্টারি গাইড লাইনের কারণে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে একাধিক কোম্পানিকে। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি একাধিক কোম্পানি।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে না পেরে বিএসইসির কাছে দুই মাস সময়ে চেয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান মেঘনা লাইফ। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। বিএসইসির কাছে মেঘনা লাইফের ২০১৬ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার সময় ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটি এ সময় বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট করার আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি একই ধরনের আবেদন করেছে আইডিআরএ’র কাছেও।

বীমা কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের ওই সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইটি ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছ আইডিআরএ। কোম্পানিগুলোর বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য গাইডলাইনটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে গাইডলাইনটি আবশ্যিকভাবে পরিপালন করতে হবে বলেও নির্দেশনা দিয়েছে আইডিআরএ।

আইডিআরএ’র নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বিষয়ে সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইনটি জারির পর তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে কোম্পানির সারপ্লাস-এ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়টি উল্লেখপূর্বক কিছু কোম্পানি গাইডলাইনটি পুনর্বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। কোম্পানিগুলোর উদ্বিগ্নতার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য কোম্পানিগুলো থেকে বিভিন্ন আর্থিক তথ্যাদি সংগ্রহ করে।

ওই তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে আইডিআরএ দেখেছে, যে সব কোম্পানির ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন কম মূলত তারাই গাইডলাইনটি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। আর যাদের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত খারাপ অর্থাৎ যারা নিয়মিত রিটার্নের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে লাইফ ফান্ড’র উল্লেখযোগ্য অংশ জমিতে বিনিয়োগ করেছে, তাদের রিটার্ন অনেক কম।

অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইন স্থগিতের বিষয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) গকুল চাঁদ দাস জাগো নিউজকে বলেন, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইনটি প্রবিধানমালা তৈরির আগেই জারি করা হয়েছিল। যে কারণে আমরা এটি স্থগিত করেছি। আমরা আশা করছি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের আগেই অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন সংক্রান্ত প্রবিধানমালা তৈরি হয়ে যাবে। এটি হওয়ার পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে গাইডলাইনটি বাস্তবায়ন করা হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাববিবরণী জমা দিতে না পারার বিষয়ে মেঘনা লাইফের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না পাওয়ার কারণে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বিএসইসির কাছে সময় চেয়েছিলাম। বিএসইসি আমাদের সময় দিয়েছে। আশা করি বর্ধিত সময়ের মধ্যেই আমরা বিএসইসি’র কাছে হিসাববিবরণী জমা দিতে পারব।

গাইডলাইনটি সাময়িক স্থগিতের আগে গত মাসে বিষয়টি নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকও করে আইডিআরএ। ওই বৈঠকে ন্যাশনাল লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জামাল মো. আবু নাসের বলেন, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইনে সুদের হারকে ফিল্টারিং করা হয়েছে। বর্তমানে ফিল্টারিং প্রযোজ্য কি না তা বিবেচনার বিষয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের বিক্রিত পলিসির ৮০ ভাগই এন্টিসিপেটেড পলিসি। এই পলিসিগুলোতে প্রাথমিক ব্যয় পরিকল্পনায় যুক্ত থাকে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা দেয়া হলে প্রাথমিক ব্যয় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সন্ধানী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, কোম্পানির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর কোম্পনির অ্যাকচুয়ারি ভ্যালুয়েশনের জন্য যে বেসিস দিয়ে থাকেন, তা অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করলে অনুমোদন দেয়া হয়। 

অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ এ সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত গাইডলাইনের বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, বীমা আইন ২০১০ এর ৩০ ও ৬৭ ধারায় অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বিষয়ে প্রবিধানমালার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়ে প্রবিধানমালা জারি হয়নি বিধায় বীমাবিধি ১৯৫৮ অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবিধানমালা প্রণীত না করে এবং বীমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসরণ না করে কেন সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইন প্রদান করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়।

বীমা কোম্পনির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের দায়িত্ব পালন করা অ্যাকচুয়ারি মো. সোহরাব উদ্দীন বলেন, সাপ্লিমেন্টারি গাইডলাইন সম্ভবত স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (মাননির্ধারণ) জন্য জারি করা হয়েছে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ থেকে দীর্ঘমেয়াদে যে রেট অব রিটার্ন পেতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে সাধারণত ভ্যালুয়েশন রেট অব ইন্টারেস্ট করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি কোম্পানির রেট অব রিটার্ন অত্যন্ত কম। এক্ষেত্রে গাইডলাইনে পলিসি লাইবিলিটি নির্ণয়ের জন্য ইন্টারেস্ট রেট (সুদ হার) ব্যবহারের জন্য যে নির্দেশনা দেয়া আছে তা অনুসরণ করলে কয়েকটি কোম্পানির ক্ষেত্রে অনেক বেশি রিজার্ভ রাখতে হবে। ফলে সারপ্লাসের পরিমাণ অনেক কমে যাবে।

এমএএস/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন