বাজেটে করবিন্যাসে ছাড়ের হিড়িক
প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় করের হার নতুন করে বিন্যাস করা হয়েছে। যেসব খাতে কর বাড়ানো বা কমানো হয়েছিল সেগুলো আবার কিছুটা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর কমানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনায় সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অন্যান্য নীতি-নির্ধারকদের নির্দেশনায় এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনার ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশকিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এগুলো হলো-
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন দুই বছরের জন্য ভ্যাটমুক্ত : অর্থমন্ত্রী বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন একটি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করে এর ধ্যান অথবা যোগ (মেডিটেশন)- এর উপরে আগামী দুই বছরে কোনো ভ্যাট আরোপ না করার প্রস্তাব করছি। প্রস্তাবিত বাজেটে এর উপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল।
কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং এর যন্ত্রাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এগুলোর উপর ভ্যাট ছিল।
শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার অ্যাসোসিয়েশনের উপর বর্তমানে বলবৎ ভ্যাট বহাল থাকবে।
মোটরসাইকেল শিল্পের উপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপনীয় সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড অনেক সফটওয়্যার আমদানি করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করে। কতিপয় পণ্য বিনা আমদানি শুল্কে আমদানি করে। যেসব পণ্যে আমদানি শুল্ক নেই সেগুলোর উপরে প্রস্তাবিত ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ যে, যারা রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করেন এবং অন্য যারা এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করেন তারা ৯০ শতাংশের অধিক হারে শুল্ক দিয়ে থাকেন। এই শুল্ক বা করের হার অবনমিত করে সংযোজনকারীদের উপর প্রযোজ্য ৩০ শতাংশের স্থলে ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়াতে চায় সরকার। সেজন্য কম্পোজিট অর্থাৎ প্লাস্টিক ও গ্ল্যাস ফাইবার নির্মিত খরচ কন্টেইনারের উপর আমদানি পর্যায়ে কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবে না।
এলপিজি সিলিন্ডার এখনও ব্যাপকভাবে আমদানি নির্ভল। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে লৌহনির্মিত এলপিজি কন্টেইনারের উপর ভ্যাট বহাল থাকবে। এক কথায় গত বছর যে ব্যবস্থাটি ছিল সেটাই অব্যাহত থাকছে।
মোটরসাইকেলের সব যন্ত্রপাতি উৎপাদনে সাহায্য করার জন্য গত বছরের অর্থবিলে প্রগ্রেসিভ উৎপাদনকে কিছু কর/শুল্কের সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এবার তাদের অগ্রগতি লক্ষণীয় না হওয়ায় সেটি বাদ দেয়া হয়। তবে তারা জানিয়েছে যে, অতিসত্বর তারা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবেন এবং সেই বিবেচনায় এর উপর বর্ধিত শুল্ক-করাদি মওকুফ করা হলো।
জাপান দূতাবাস ও নিটোল নিলয় কোম্পানি জানিয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে হোন্ডা ও অন্যান্য কোম্পানি মোটরসাইকেল এবং মোটর গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। সেই বিবেচনায় প্রয়োজনীয় উপকরণের উপর আমদানি পর্যায়ে হ্রাসকৃত হারে শুল্ক-কর আরোপ করা হয়েছে।
সোলার প্যানেল আমদানি শুল্ক বাদ দেয়া হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে বর্তমানে নানা ধরনের নৌযান যেমন- মাল্টি পারপাস নৌযান, বার্জ ও ট্যাঙ্কার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত আছে। এ সম্বন্ধে আয়কর বিষয়ক এসআরও-তে যথাযথ সংশোধন করা হবে।
তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল থাকবে। তবে সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়করের হার ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি তামাক ও সিগারেট বিষয়ক তাদের কর ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিষয়টি বাজেট পাস হবার পর একটি এসআরও জারি করে নিষ্পত্তি করা হবে। তবে, উক্ত এসআরও জারির পূর্ব পর্যন্ত গত ০১ জুন, ২০১৭ তারিখে ঘোষিত মূল্য ও করহার এক্ষেত্রে বহাল থাকবে।
দেশের কেবল টিভি নেটওয়ার্ক ডিজিটাল অ্যাড্রেসেবল টিভি সিস্টেমের আওতায় আসবে। এই ব্যবসায় লিপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে যে, সেজন্য বেশ দামি অ্যাড্রেসেবল সেট-বক্স আমদানি করা দরকার। বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে অদূর ভবিষ্যতে এই সিস্টেমের উপর শুল্ক-করাদি আরোপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করব।
গ্লাসওয়্যার পণ্যের উপর দেশীয় শিল্প সহায়ক শুল্ক কাঠামোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামীতে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একইভাবে গুঁড়া মসলা জাতীয় পণ্য- মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এগুলোর ট্যারিফ মূল্য বহাল রেখে ভ্যাটের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এমএ/এমএআর/পিআর