ঈদকেন্দ্রিক চাঙা শেয়ারবাজার
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। কয়েকদিন ধরে টানা মূল্যসূচক বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। ঈদের আগের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ ও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর। এ নিয়ে টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকল।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩১ পয়েন্ট। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর সার্বিক মূল্যসূচক বেড়েছে ৫৬ পয়েন্ট। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস উভয় বাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান ঘটল।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। রোজার মধ্যে ভাগে ঈদের খরচ জোগাড় করতে অনেকে শেয়ার বিক্রি করার চেষ্টা করেন। যে কারণে ওই সময় বিক্রির চাপ বেশি থাকায় কিছুটা দরপতনও হয়। সেই সঙ্গে কমে যায় লেনদেনের পরিমাণ। দরপতনের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। এতে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী রোজার শেষ সময়ে এসে শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়েছেন। এতে ক্রয়ের চাপ বাড়ায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার। সেই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন বুধবার এই সূচকটি বেড়ে ছিল ৪০ পয়েন্ট এবং মঙ্গলবার বেড়ে ছিল ৪৮ পয়েন্ট। আর সোমবার বেড়ে ছিল ১৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ল ১৩৬ পয়েন্ট।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বেড়েছে অপর দুটি সূচক। ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৮টি বা ৫৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ৯৪টির বা ২৯ শতাংশের। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টির বা ১৪ শতাংশের দাম।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৪৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭০০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৪৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলম বলেন, রোজার মাঝামাঝি সময়ে ঈদ কেন্দ্রীক শেয়ার বিক্রির একটি চাপ থাকে। সে সময় শেয়ারের দাম কিছুটা কমে যায়। এরপর রোজার শেষের দিকে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয় শেয়ারবাজার। গত কয়েকদিন ধরে বাজারে যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা মূলত ঈদ কেন্দ্রিক।
তিনি বলেন, ঈদের খরচ জোগাড় করতে যারা শেয়ার বিক্রি করেছিলেন, তাদেরই একটি অংশ আবার শেয়ার ক্রয় করছেন। অবার এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা আছেন যারা শেয়ারের দাম কমার অপেক্ষায় ছিলেন, তারা ঈদের সামনে শেয়ার কম দামে পাওয়ায় ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে বাজার এখন বেশ স্থিতিশীল। এ মুহুর্তে বাজারে বড় দরপতনের তেমন সম্ভাবনা নেই।
বৃহস্পতিবার টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লংকাবাংলার শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিজেন্ট টেক্সটাইলের ২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- স্কয়ার ফার্মা, রতনপুর রি-রোলিং মিলস, ব্র্যাক ব্যাংক, আমরা টেকনোলজি, ইফাদ অটোস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল এবং গ্রামীণফোন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯০ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৪১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩২টির। অপরদিকে দাম কমেছে ৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির দাম।
এমএএস/এমআরএম/এমএস