‘খেলাপিদের কাছে সোনালী ব্যাংক অসহায়’
খেলাপিদের কাছে সোনালী ব্যাংক অসহায়। তাই খেলাপি ঋণ কমাতে রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
বুধবার মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
মাসুদ বলেন, ছোট অঙ্কের ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে মামলার মাধ্যমে ঋণ আদায়ে ব্যাংক সফল হলেও বড় অঙ্কের ঋণগ্রহীতাদের কাছে সোনালী ব্যাংক অসহায়।
এমডি বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংকের একক সমস্যা নয়। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। এজন্য স্বতন্ত্র আদালত গঠন করা দরকার বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, গত আগস্টে যোগদান করেছি। তখন ব্যাংকের ক্রান্তিলগ্ন ছিল। ব্যাংকটির এক লাখ কোটি টাকা আমানত রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ সম্ভব হয়েছে। এ ঋণের মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি। অবলোপনের ৭ হাজার কোটি ও পুনঃতফসিলের জালে আটক দুই হাজার কোটি টাকাসহ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১৯ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের অর্ধেক।
এমডি আরও বলেন, এই খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। ব্যাংকটির এক হাজার ২১০টি শাখার মধ্যে সারাদেশের ৬০০ শাখায় খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশেরও কম। কিন্তু ২০টি শাখায় ৮৪ শতাংশ এবং ৫টি শাখায় মোট খেলাপির ৫৪ শতাংশ রয়েছে। দুষ্টু ঋণগ্রহীতারা কয়েকটি শাখা থেকে ঋণ নিয়ে আটকে দিয়েছেন।
হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সাল ব্যাংকের জন্য খারাপ সময় গেছে। ওই সময়ে হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটেছে। হলমার্ক গ্রুপের ক্ষেত্রে ঋণের নামে টাকা লুণ্ঠন হয়েছে। হলমার্কের টাকা আদায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ১৬টি মামলা ডিক্রি আদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসেছে। এটি নিষ্পত্তি হলে ব্যাংক টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তিনি বলেন, হলমার্কের যে পরিমাণ ঋণ আছে সেই পরিমাণ সম্পদ নেই। পাওনা আদায়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শর্তসাপেক্ষে হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডিকে জামিন দিয়ে কারখানা চালুর সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এটি করতে হলে আদালত ও দুদকের অনুমতি লাগবে। দ্বিতীয়ত, ওই কোম্পানিতে প্রশাসক বসিয়ে কারখানা চালু করা যেতে পারে। তৃতীয়ত, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে এই অবস্থায় রাখা যেতে পারে।
বড় ঋণ খেলাপিদের ছাড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, মাত্র দুটি বড় গ্রুপের খেলাপি ঋণে ছাড় দেয়া হয়েছে। তা আদায় কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। তবে আগের অনিয়মের যেসব খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে সেগুলো খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালের পর খেলাপি ঋণ বাড়েনি। সেই সময়ের খেলাপি ঋণগুলো এখন হিসেবে আসছে। যার ফলে মার্চে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আরও ৩০০ কোটি টাকা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ডিএমডি তারিকুল ইসলাম চৌধুরী, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাজেদুর রহমান খান, খায়রুল কবির, পরিতোষ কুমার তরুয়া, আতাউর রহমান, আবুল হাসেম ও ডিজিএম রনেন্দ্রনাথ মণ্ডল।
এসআই/জেএইচ/এএইচ/পিআর