কর্পোরেট ট্যাক্স কমছে
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে এ হার সাড়ে ২২ শতাংশ করা হতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ (ডিএসই) বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তলিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কর্পোরেট ট্যাক্সের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট ট্যাক্স হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পাশাপাশি শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত অন্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ (ভ্যাট নিবন্ধনের শর্ত থাকবে) এবং অন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।
এছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট ট্যাক্স হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে। আর মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার ৩৫ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর’র পক্ষ থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে কর্পোরেট ট্যাক্স হারের ব্যবধান ২০শতাংশ হতে হবে। পাশাপাশি কমপক্ষে ২০ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে নতুন করে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে তাদের তিন বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দিতে হবে।
দাবির পক্ষে ডিএসইর যুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্প ও সেবা খাতে অর্থসংস্থানের প্রধান উৎস পুঁজিবাজার। এখানে সুশাসনের বাধ্যবাধকতায় অনেক কোম্পানিই তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী না। আবার বিদেশি ও ভালো কোম্পানিগুলো বিশেষ সুবিধা না পেলেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মালিকানা সাধারণদের হাতে ছেড়ে দিতে চায় না। অথচ শেয়ারবাজার গতিশীল করতে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি জরুরি। তাই শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে বিশেষ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে অতালিকাভুক্ত উৎপাদনশীল কোম্পানির ৩৫ শতাংশ ও তালিকাভুক্ত উৎপাদনশীল কোম্পানির ২৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ৪০ শতাংশ ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সাড়ে ৪২ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংকের ৩৫ শতাংশ, সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স কোম্পানির ৪৫ শতাংশ এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয়।
এনবিআর সূত্র বলছে, এফবিসিসিআই ও ডিএসই’র দাবির প্রেক্ষিতে কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্সের বিষয়ে এফবিসিসিআই’র দেয়া প্রস্তাবকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তারই আলোকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স হার সাড়ে ২২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
সূত্র বলছে, শেয়ারবাজার গতিশীল করতে ডিএসইর প্রস্তাবগুলোও বিশেষ বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স হার যে পরিমাণ ছাড় চেয়েছে তা দেয়া সম্ভব নয়। তবে বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য অন্য কোনো বিশেষ সুবিধা থাকলেও থাকতে পারে।
এদিকে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, এবার সর্বোচ্চ কর্পোরেট করহার কমানোর চিন্তা করছে সরকার।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানো হলে তা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স হারে মোটামুটি ভালো ব্যবধান থাকা দরকার। তা না হলে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে খুব একটা আগ্রহী হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারের যে আকার তাতে তালিকাভুক্তি কোম্পানির সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। কর্পোরেট ট্যাক্স কমালে নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহী হবে। আর নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারে নতুন ফান্ড আসবে। এতে তারল্য বাড়বে। যা সার্বিক পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
এমএএস/জেএইচ/এএইচ/জেআইএম