ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ দ্বন্দ্বের কারণে পরিচালকদের মধ্যে এরইমধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের ফলে নবগঠিত পর্ষদ গঠনের পাঁচ মাস না যেতেই তাতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি ব্যাংকের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে নয়জন পরিচালক পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছেন।
অন্যদিকে, শনিবার এক বিবৃতি দিয়েছেন ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। বিবৃতিতে ব্যাংকের ২১ জন পরিচালকের মধ্যে নয়জনের সই রয়েছে। এছাড়াও তিনজন বিদেশে রয়েছেন, যারা এই বিবৃতির পক্ষে মত দিয়েছেন বলে দাবি আহসানুল আলম পারভেজের।
তবে এ নিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছি তা সবই ইতিবাচক ও সত্য। আর ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব যে পদ্ধতিতে কাজ করছেন সেটাও ঠিক হচ্ছে না।’
প্রফেসর আহসানুল আলম পারভেজের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সৈয়দ আহসানুল হকসহ অন্য পরিচালকদের পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তারা (সদস্যরা) এই হীন বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের নেপথ্য শক্তিকে বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আনার সিদ্ধান্ত নেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের পরিচালকদের সরাতে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো পরিচালককে হুমকির মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলে অনেক সম্মানিত পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করবেন। কারণ তাদের পক্ষে স্বাধীন ও সম্মানজনকভাবে ব্যাংক পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
মূলত, চলতি মাসের ১৩ তারিখে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, ‘এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকের জাকাতের অর্থ সরাসরি বণ্টন না করে তা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডের মাধ্যমে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তবে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩৪৭ কোটি টাকা জাকাত ফান্ডে এসেছে। এরমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকা। আর কিছু টাকা ট্যাক্সের জন্য আলাদা করে রেখে এ ফান্ডে বিতরণ উপযোগী টাকা আছে ২৮ কোটি।’
আরাস্তু খান বলেন, ‘বোর্ডসভায় ব্যাংকের জাকাতের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে দেয়ার কোনো কথাই হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে ডাকা হয়েছিল। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ৪০ মিনিট কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, পত্রিকাতে যে খবর বের হয়েছে সেটার মানে কী? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাকে এটাও বলা হয়েছে যে, ফান্ডে আছেই মাত্র ২৮ কোটি টাকা।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরাস্তু খান বলেন, ‘সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ না জেনে কথা বলেন। তার সঠিক জ্ঞান নেই। তিনি পরিচালকের অর্পিত দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন।’
তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা পর্ষদের বিষয়। পর্ষদ যা ভাল মনে করবে সেটাই হবে।’
আরাস্তু খান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাংকের পর্ষদ জিম্মি হয়ে গেছে তাই সৈয়দ আহসানুল আলম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ভিত্তিহীন।’
আহসানুল আলমকে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে বলেছেন এ দাবি অসত্য উল্লেখ করে আরাস্তু খান আরও বলেন, এসব অসত্য কথা বলে তিনি ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। আহসানুল আলম যদি পদত্যাগ করতে চান সেটা ভালো কথা।কিন্তু ব্যাংকে বিষয়ে বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছেন।’
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। পর্ষদ সভায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ার পদত্যাগ করায় আরাস্তু খানকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেব নির্বাচিত করা হয়। তিনি এর আগে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক পদত্যাগ করায় নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ইউসুফ আবদুল্লাহ্ আল-রাজী পুননির্বাচিত ও অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলমকে নির্বাচিত করা হয়।
এছাড়া এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সরিয়ে নতুন এমডি হিসেবে ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদ মিঞা নিযুক্ত করা হয়।
এসআই/এসআর