ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বিদেশে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে তিন প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ১১ মে ২০১৭

দেশের শীর্ষস্থানীয় তিন প্রতিষ্ঠানকে তিন কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার ইউএস ডলার বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে বেশকিছু ক্ষেত্রে দেশ উপকৃত হবে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মন্দা, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং রফতানি আয়ের শ্লথগতি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের উপর চাপ ফেলতে পারে। এ অবস্থায় বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

দেশীয় এ তিন কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি আগামী অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আকিজ জুট মিলস মালয়েশিয়ায় দুটি কোম্পানি অধিগ্রহণের জন্য দুই কোটি ডলার বিদেশে নিতে চায়। হা-মীম গ্রুপ হাইতিতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করতে এক কোটি ৪৪ হাজার ডলার নিতে চায়। এছাড়া নিটল-নিলয় গ্রুপ গাম্বিয়ায় ব্যাংক স্থাপনের জন্য ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হলে তিনি এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্তিসভা কমিটির জন্য সার-সংক্ষেপ উপস্থাপনের নির্দেশনা দেন।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যায়ন হচ্ছে, আমাদের দেশে এখন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ ও সামর্থ্য আছে। অন্যদিকে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসী রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে। এক্ষেত্রে আলোচ্য বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো নাম করা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে এবং তাদের বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত অর্থ দেশে প্রত্যাবাসনের সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও হ্রাস পেলে এ ধরনের বিনিয়োগ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ওই তিন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আরও বলেছে, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম। জ্বালানি তেল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে এবং রফতানি প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় কমছে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে ২০০ কোটি ডলার নিয়ে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনে সরকার সায় দিয়েছে, ২৫০ কোটি ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। এদিকে, দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানকরত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করা হচ্ছে। বিদেশে মূলধন বিনিয়োগে আগ্রহীদের এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের উন্মুক্ত সুযোগ রয়েছে। এখানে বিনিয়োগের ফলে এদেশে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া কতটা যৌক্তিক তা চিন্তার বিষয়।

বিনিয়োগের জন্য বিদেশে পাঠানো অর্থ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা, বিদেশে আয় করা মুনাফা দেশে আনা, টাকা নিয়ে গেলে তা ফেরত আসবে কি না প্রভৃতি বিষয় বিবেচনার পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। স্থানীয় পর্যায়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে বলেও উল্লেখ করে ব্যাংক ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্বব্যাপী যদি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে অথবা আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ স্বস্তিজনক থাকবে না। আবার বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে টাকার বিনিময় হারের উপর প্রভাব পড়ে কি না, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

বর্তমান আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। যদিও ব্যাংকিং সূত্রগুলো বলছে, অনুমোদন ছাড়াই অনেকে অবৈধ পথে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন রফতানিকারক ব্যবসা বাড়াতে অন্য দেশে লিয়াজোঁ বা সহযোগী অফিস খোলা ও ব্যয় নির্বাহে বছরে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালের পর এখন পর্যন্ত রফতানি প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) থেকে সাত প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ডিবিএল গ্রুপ ইথিওপিয়ায় একটি পোশাক কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে তারা সেই কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে চায়। ডিবিএলকে পর্যায়ক্রমে ৯৫ লাখ ডলার সেখানে নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া মবিল যমুনা মিয়ানমারের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে। এসিআই হেলথকেয়ার যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখ ৪৭ হাজার ডলার এবং স্কয়ার ফার্মা ৫০ লাখ ডলার নেয়ার অনুমতি পেয়েছে।

২০১৪ সালে এস্তোনিয়ায় বিনিয়োগের অনুমতি পায় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। যুক্তরাজ্যেও ১০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড বিনিয়োগে একটি নিজস্ব সাবসিডিয়ারি খুলেছে কোম্পানিটি।

আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় ইস্পাত কারখানা খোলার অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিল। প্রতিষ্ঠানটিকে শর্তসাপেক্ষে রফতানি প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) থেকে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার কেনিয়ায় বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং পেয়েছে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের অনুমতি।

এমইউএইচ/এমএআর/বিএ