বন্দর সংস্কার করলে নৌপরিবহন ব্যয় ৯ ভাগ কমবে
রফতানি বাণিজ্য ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশকে বন্দর সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো বন্দরে উন্নয়ন করলে ৯ শতাংশ পর্যন্ত শিপিং খরচ কমানো সম্ভব, যা এই অঞ্চলের রফতানি মূল্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে।
এতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বন্দরের সংস্কার করা সম্ভব না হলে ব্যক্তিখাত থেকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ প্রদান করেছে সংস্থাটি। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, ভারতীয় উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশ বেসরকারি খাত থেকে কন্টেইনার পোর্টে অর্থবহ ভূমিকা পালন করে না।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের কনটেইনার পোর্ট আরও কার্যকর করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সক্ষমতা বাড়বে। বাণিজ্যে তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে। একই সঙ্গে আরও বেশি বেশি চাকরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বিশ্বব্যাংকের ‘দক্ষিণ এশিয়ার কনটেইনার পোর্টের প্রতিযোগিতা’শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় গত দুই দশক ধরে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল। এ অঞ্চলের পোর্টের অদক্ষতার কারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করছে। অথচ পূর্ব এশিয়ার মতো অন্যান্য অঞ্চলে এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশের বন্দরগুলো ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো কার্যকর করা সম্ভব হয়, তাহলে এর মাধ্যমে ৯ শতাংশ পর্যন্ত শিপিং খরচ কমাতে পারবে বাংলাদেশ, যা রফতানির মূল্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ‘পোশাক শিল্পের মতো শ্রমঘন শিল্পখাত চীন থেকে বাংলাদেশের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এজন্য বিশ্বব্যাপী পোশাক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করার মতো সম্ভাবনা বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফ্যান বলেন, বাংলাদেশের বর্ধিত শ্রমশক্তির জন্য নতুন বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কন্টেইনার পোর্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কনটেইনার পোর্টগুলো সংস্কারে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ খুবই কার্যকর হয়েছে। এতে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশ বেসরকারি খাত থেকে কন্টেইনার পোর্টে অর্থবহ ভূমিকা পালন করে না।
বাংলাদেশে চট্টগ্রামের ৯০ শতাংশের বেশি কন্টেইনার ট্রাফিক পরিচালনা হয়। কিন্তু এখানে বিনিয়োগের ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়িয়ে কন্টেইনার পরিবহনে সময়ক্ষেপণ দূর করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক বড় অংশীদার। বিশ্বব্যাংক এ পর্যন্ত প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সুদমুক্ত ঋণের সর্বোচ্চ গ্রাহক।
এমএ/জেডএ/ওআর