ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বিচারহীনতার সংস্কৃতি অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ০২ মে ২০১৭

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অর্থ পাচারের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। এর পেছনে মূল কারণ, অর্থ পাচার করলেও এর কোনো বিচার হয় না। পাচারকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হয় না, অর্থ ফেরত আনারও কোনো উদ্যোগ নেই। এর বাইরে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও আস্থার সংকটও রয়েছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ থেকে ১০ বছরে পাচার হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা (৪ হাজার ৪৬১ কোটি ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার), যা দেশের বর্তমান মোট জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। জিএফআই তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে ২০০৫-২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪৯টি দেশের অর্থ পাচারের তথ্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মঙ্গলবার জাগো নিউজকে বলেন, অর্থ পাচারের পিছনে দুটি অনুসঙ্গ রয়েছে। প্রথমত চাহিদার দিক, তার মানে বাংলাদেশ থেকে যে দেশে অর্থ পাচার হচ্ছে সে দেশের আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা অনুকূলে থাকে। সে দেশে অর্থ পাচার হওয়ার মতো যথেষ্ট অনুকূল পরিবেশ আছে। দ্বিতীয়ত,  অর্থ পাচারকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। কখনো তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হয় না। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার নজির কম। ইতিপূর্বে মাত্র দু-একটা উদাহরণ রয়েছে। অর্থাৎ বিচারহীনতার সংস্কৃতি অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অর্থ পাচার রোধে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো রয়েছে। কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক সঙ্গে কাজ করলে এই অর্থ পাচার কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করারও তাগিদ দেন তিনি।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় কেউ দেশে বিনিয়োগের বিষয়টি ভাবছে না। সবার মধ্যে আস্থার সংকটে রয়েছে। এ ছাড়া অর্থসুরক্ষা ও বেশি লাভের আশায় কেউ কেউ টাকা বিদেশে পাঠাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমদানি-রফতানির আড়ালেও অর্থ পাচার হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারিও বেড়েছে যার চিত্র জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে বিদেশে অর্থ পাচার অনেক পুরনো। আগের পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতি বছরই অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। এজন্য এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

জিএফআই প্রকাশিত ‘নতুন গবেষণা : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বড় এবং স্থায়ী অবৈধ আর্থিক প্রবাহ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্য বা সেবা আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের বড় সমস্যা হলো অবকাঠামো দুর্বলতা। এছাড়া কোনো উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতে চাইলে সঠিক সময়ে গ্যাস বিদ্যুতের সংযোগ পান না। জমি বরাদ্দ পাওয়াও অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য অনেক ব্যবসায়ী মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম হিসাবে গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা বিদেশ নেয়া যেহেতু অনেক কঠিন, এজন্য অবৈধভাবে নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডরিং প্রতিরোধে কাজ করছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, জিএফএই প্রতিবছর এ ধরনের প্রতিবেদন করে। যা অনুমান নির্ভর। এজন্য এ বিষয়ে বথা বলা  কঠিন। তবে বাংলাদেশ থেকে কোন অর্থ যেন পাচার না হয় সে বিষয় মানি লন্ডারিং বিভাগ কাজ করছে। এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এমএ/জেএইচ/এএইচ/আরআইপি

আরও পড়ুন