মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ আদায় চলছে
মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) অতিরিক্ত চার্জ আদায় করা হচ্ছে জানিয়ে তা কমানোর দাবি জানিয়েছেন খাত সংশি¬ষ্ট বিশিষ্টজনরা।
একইসঙ্গে ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স না দেয়ার অনুরোধও জানান তারা। তবে এমএফএস সার্ভিস চার্জ না কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন মোবাইল ব্যাংকিং মালিকরা।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে আসে।
সভায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যত করণীয় শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মনজুর হোসাইন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ, বিকাশের কর্ণধার কামাল কাদির, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর প্রমুখ।
বিআইডিএস আয়োজিত ‘ক্রিটিকাল কনভারসেশন-২০১৭, বাংলাদেশ জার্নি: এক্সিলারেটিং ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনও সোমবার শেষ হয়।
সভায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের উচ্চ সার্ভিস চার্জের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিআইডিএস। বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলাদেশের সার্ভিস চার্চের পরিমাণ অনেক কম। এছাড়া বেশি টাকা পাঠালে সার্ভিস চার্জের পরিমাণ কমানো হলেও বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো তা করছে না। এতে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ আদায়ের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিকাশের কর্ণধার কামাল কাদির বলেন, লাখ টাকার লেনদেন হলে ব্যাংকে যাওয়া উচিৎ। কারণ বিকাশ ছোট লেনদেনের জন্য। তার মতে, ছোট লেনদেনকারীরা কখনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করেছেন বড় লেনদেনকারীরা। তাই তাদের ব্যাংকে লেনদেন করাই ভালো।
তিনি বলেন, কিছু জটিলতার কারণে সার্ভিস চার্জ বাড়ছে। এক্ষেত্রে সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং বাজারটি প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়েছে। তবে যৌক্তিক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসি। কিন্তু এখনও কোনো সমাধানে আসতে পারেনি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়েছে। তবে খাতটিতে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ।
বিডি জবসের প্রধান ফাহিম মাশরুর বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সার্ভিস চার্জ কমাতে হবে। আইন-কানুন আরও সহজ করতে হবে। সমস্যা থাকলে সমাধান অন্যভাবে করতে হবে। তবে লেনদেন সীমা কমানো ঠিক হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের বাইরে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেয়াও ঠিক হবে না।
বিআইডিএসের গবেষণাপত্রে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৮১ শতাংশ বিকাশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এটা কেন ? খাতটিতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান প্রবেশ করতে পারছে না। এতে কোনো একক বা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরোক্ষ বাধা থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পক্ষে মত দেয় সংস্থাটি।
এর আগে একই অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে বক্তারা বলেন, দেশের সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকিং খাত। বিশেষ করে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এজেন্ট ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্র সঞ্চয় কার্যক্রম পুরোপরি সাফল্য পায়নি।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সার্ভিস চার্জ কমিয়ে সেবাটিকে আরও সহজ করার পরামর্শ দেন তারা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড ব্যাংকিং স্টোর: সাম ক্রিটিক্যাল ইস্যুজ’ ছাড়াও ‘সাসটেইনেবল সিটিস ইন বাংলাদেশ: ইস্যুজ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস’, ‘ফিউচার রোল অব মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস’, ‘ক্লাইমেট ইনডিউসড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ: ইস্যুজ অ্যান্ড কনসার্নস’, ‘স্টেট অব উইম্যান এন্টারপ্রিনারশিপ: হোয়াট উই হ্যাভ অ্যাচিভসড’, ‘এনার্জি স্ট্র্যাটেজি’, ‘চ্যালেঞ্জ অব দ্য ন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি’ এবং ‘টুওয়ার্ডস দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এমএ/এসআর/জেআইএম