বাজেটে সক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে ভ্যাটের হার কমানো জরুরি : সিপিডি
আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মূসকের (মূল্য সংযোজন কর) হার কমানো জরুরি বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উত্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম।
এতে বলা হয়, ভারত, ভিয়েতনাম ও উগান্ডার মতো দেশ বাজেট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এ অবস্থায় আগামী বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিপিডি বলছে, বাজেটের আকার বড় হলেও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি সম্প্রসারণশীল বা বড় বাজেট নেয়ার অবস্থা বিদ্যমান। তবে বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে বড় বড় নীতি সংস্কার করতে হবে।
অন্যদিকে ১ জুলাই থেকে নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে।
সংস্থাটি বলছে, ১৫ শতাংশ মূসক হার ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেভাবে ১৫ শতাংশ মূসক হার নির্ধারণ করেছে তা থেকে কমানোর সুযোগ এখন নেই। তবে ক্রমান্বয়ে এ হার ১৫ থেকে ১২ শতাংশে নিয়ে আনা উচিত হবে। কেননা বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনীতিতে তুলনীয় দেশেগুলোতে ভ্যাটের হার ১২ শতাংশ রয়েছে।
ভ্যাটের হার কমানোর সুপারিশ করে সিপিডি’র প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশের সমতুল্য দেশগুলোতে গড় ভ্যাটের হার ১২ শতাংশ।
এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, পূর্ব এশিয়ার নিম্ন-মধ্যম আয়ের ১১টি দেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার নিম্ন-মধ্যম আয়ের ১৪টি দেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, নিম্ন-মধ্যম আয়ের ৫৫টি দেশে ১৪ শতাংশ এবং বিশ্বের ১৯০টি দেশে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তাই ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশেও এ হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, আগামী দুই বছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যখন আহরণ বাড়বে তখন ক্রমান্বয়ে এ হার কমিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ হলে বাজারের উপর চাপ সৃষ্টি হবে।
‘যেসব খাত এর আগে ভ্যাটের আওতায় ছিল না তাদের উপর চাপ বেশি আসবে। ভ্যাটের এ চাপ সামলাতে নাগরিকদের ব্যয়যোগ্য আয় বাড়াতে হবে’- যোগ করেন তিনি।
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। নতুন আইনে একেবারে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এটি না করার সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, মূসক আইন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। এর মধ্যে আধুনিক মেশিন স্থাপন ও বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘ভোক্তা যদি ভ্যাট দেয়, আর রিসিপ্ট (রশিদ) না নেয় তাহলে কখনও এ আইনের সুফল ভোক্তা পাবে না। জনগণকে সম্পৃক্ত ও মতামত নেয়ার মাধ্যমে এ আইন বাস্তবায়নের সুপারিশ করা উচিত,’ বলেন সিপিডি’র এই গবেষক।
এমএ/এমএমএ/জেআইএম