ডিএসইর ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন
দরপতনের বৃত্তে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই দরপতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ।
এ নিয়ে ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) টানা দ্বিতীয় দিন দরপতনের ঘটনা ঘটল।
মূলত ৩০ মার্চ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের লভ্যাংশ ঘোষণার পর থেকেই শেয়ারবাজারে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই ব্যাংক খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন ঘটছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৯৭টির বা ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় কমেছে। অপরদিকে দাম বেড়েছে ৮৬টির বা ২৬ শতাংশের। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টির বা ১৪ শতাংশের দাম।
এদিন সব থেকে বেশি দরপতন হযেছে ওষুধ ও প্রকৌশল খাতের কোম্পানির শেয়ারের। ওষুধ খাতের ২৮টির মধ্যে ২০টির দাম কমেছে এবং বেড়েছে ৬টির। প্রকৌশল খাতের ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম কমেছে এবং বেড়েছে ৯টির।
এদিকে ব্যাংক খাতের লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৭টিরই দরপতন হয়েছে। আর দাম বেড়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর্থিক খাতের ২৩টির মধ্যে ১৪টির দাম বেড়েছে এবং কমেছে ৮টির দাম। বীমা খাতের ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ২৬টির, বেড়েছে ১৭টির।
শেয়ারবাজারে বড় ভূমিকা রাখা অন্য খাতগুলোর মধ্যে খাদ্য খাতের ১৮টির মধ্যে ১০টির দাম কমেছে এবং বেড়েছে ৫টির। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৮টির মধ্যে ১১টির দাম কমেছে এবং বেড়েছে ৬টির।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো মুনাফার পরও ইসলামী ব্যাংকের সীমিত লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে শেয়ারবাজারে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এ ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। শুধু একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে শেয়ারবাজারের সকল প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা ঠিক না।
বাংলাদেশ সিকউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দীকি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কম লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে- এটি কোনো যুক্তিসংগত কারণ নয়। এমনটি হওয়াও ঠিক না। আমরা ধারণা, যে দরপতন দেখা দিয়েছে তা দু-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল ইসলামী ব্যাংক ভালো লভ্যাংশ দেবে। তবে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে তারা সীমিত লভ্যাংশ দেয়। আমার ধারণা, এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ১১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ৯৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৬২ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ব্যাংকের ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাইফ পাওয়ার।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- আইডিএলসি, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, ওয়ান ব্যাংক, আরএসআরএম স্টিল, বেক্সিমকো ফার্মা, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও ব্র্যাক ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭৮৭ পয়েন্টে। বাজারটিতে ৬০ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদন হয়েছে। লেনদেন হওয়া ২৪৯টি ইস্যুর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৭টির, কমেছে ১৫৪টির এবং অপরিবর্তীত রয়েছে ২৮টির দাম।
এমএএস/এমএআর/পিআর