রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার বৃত্তে অধিকাংশ মিশন
রফতানি উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত মিশনগুলোর প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতার নির্দেশ কোনো ফল দিচ্ছে না। ফলে রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না অধিকাংশ বিদেশি মিশন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, মোট ৫৬টি মিশনের মধ্যে চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি ৩৪টি বাণিজ্যিক মিশনে। বাকি ২২টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিদেশে অবস্থিত রফতানি মিশনগুলো তাদের আয় বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। অর্ধেকের বেশি মিশন তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। উপরন্তু বেশ কয়েকটির আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে।
দেশের প্রধান রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নয়াদিল্লি এবং সিঙ্গাপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশে অবস্থিত মিশন এই ব্যর্থের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা মিশনের ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মিশনের সাড়ে ৬ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৪৭ শতাংশ, দুবাইতে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ৩ শতাংশ এবং কানাডার অটোয়া মিশনে প্রায় ৪ শতাংশ রফতানি কমেছে।
তবে কিছুটা স্বস্তির বিষয় হলো, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান এবং নয়াদিল্লির মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলোর আয় বেড়েছে। যেসব মিশন লক্ষ্যমাত্রা ও গত অর্থবছরের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সেগুলো হলো, ক্যানবেরা, অটোয়া, ইয়াঙ্গুন,সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডন, ওয়াশিংটন, থিম্পু, ব্রাসেলিয়া, কায়রো, হংকং, আম্মান, নাইরোবি, সিওল, ত্রিপোলি,মেক্সিকো সিটি, রাবাত, ম্যানিলা, পিটোরিয়া, কলম্বো, অঙ্কারা ও হ্যানয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশে গত বছরের চেয়ে আয় বেড়েছে সেসব দেশ হলো, ব্রাসেলস, নয়াদিল্লি, টোকিও, কুয়ালালামপুর, মাদ্রিদ, মানামা, দারুসসালাম, এথেন্স, বাগদাদ, কুয়েত, দোহা ও স্টকহোম। যেসব দেশ মিশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এবং গত বছরের চেয়ে আয় বেড়েছে সেগুলো হলো, বেইজিং, প্যারিস, বার্লিন, মস্কো, জেনেভা, ভিয়েনা, কোপেনহেগেন, জার্কাতা, রোম, বৈরুত, মালে, পোর্ট লুইস, ওয়ারসো, কাঠমুন্ডু, ইসলামাবাদ, লিসবন, রিয়াদ ও ব্যাংকক।
এদিকে তেহরান, মাস্কাট ও তাসখন্দ মিশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও গত বছরের চেয়ে আয় কমেছে। যদিও ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিশনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের রফতানির চিত্র আশাব্যঞ্জক বলা যায়। কিছু মিশন পিছিয়ে পড়লেও অনেক মিশন ভাল করছে। মিশনগুলোর কাজ হলো, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ করে দেয়া। বাকি কাজটা করতে হবে ব্যবসায়ীদের। দ্বিপক্ষীয় সংযোগ ঘটানোই মিশনগুলোর প্রধান ভূমিকার বিষয়।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রথম পাঁচ মাসে মিশনগুলো আয় করেছে এক হাজার ৩২৭ কোটি চার লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৩৯০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে চার শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় চার শতাংশ বেশি। এদিকে বিদেশে মোট ৫৬টি মিশনের মধ্যে ১৮টির কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। এসব উইংয়ের মধ্যেও মাত্র ছয়টি রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ও আগের বছরে চেয়ে বেশি আয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে সাতটি দুই ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে, পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে থাকলেও আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে।
এ প্রসঙ্গে রফতানিকারকদের সংগঠন ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গতানুগতিক দেশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রফতানি খাত। নতুন নতুন দেশের দিকে ব্যবসায়িক পরিসর বাড়াতে হবে। মিশনগুলো এই কাজে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে পারে। বিশেষ করে কোন দেশে কখন কোন ধরনের পণ্যের উপযোগিতা ও চাহিদা রয়েছে, সেটা তারা খুঁজে বের করে সে মোতাবেক ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিতে পারে। তবেই সফলতা আসবে।
এমএ/এমআরএম/ওআর/পিআর