ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

এসব শেয়ার কিনছে কারা?

প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

জিল বাংলা সুগার মিল লিমিটেড। সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি কোনো মুনাফা করতে পারেনি। বরং ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসানে আছে। শেয়ারপ্রতি ১৪ টাকা লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৮১ শতাংশের ওপর। আর ৮ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৯০০ শতাংশ।

গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে জিল বাংলা সুগার মিলের শেয়ার দর ছিল ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর ২২ নভেম্বর শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ টাকা। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় ২৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ৪৫ টাকা ২০ পয়সায় ওঠে। এরপর কিছুটা নিম্নমুখী হয় ‘জেড’ ক্যাটাগরির এই শেয়ারটির দাম। রোববার (১৫ জানুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়।
 
শুধু জিল বাংলা নয়, শেয়ারবাজারের পচা কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ‘জেড’ গ্রুপের দেড় ডজন কোম্পানির শেয়ার দর এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়া এসব কোম্পানির অধিকাংশই রয়েছে লোকসানে।
 
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে দাম বাড়া কোনো ভালো লক্ষণ নয়। বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। গুজবে কান দিয়ে হুজুগে বিনিয়োগ না করে ভালোভাবে তথ্য যাচাই করে বিনিয়োগ করতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর জেড গ্রুপে এবং লোকসানে থাকার পরও এসব কোম্পানির শেয়ার কারা কিনছেন তাও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খুঁজে বের করতে হবে।
 
তাদের মতে, সম্প্রতি পুঁজিবাজার কিছুটা ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কোনো চক্র যদিফায়দা লুটতে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির দাম বাড়ায় তা বাজারের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
 
সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ৩০ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছে রহিমা ফুডস। অথচ সেপ্টেম্বরের তুলনায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩০০ শতাংশের ওপর।
 
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে গত অক্টোবর থেকে। ১৬ অক্টোবর রহিমা ফুডসের দাম ছিল ৫৯ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ১৪ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম উঠে আসে ১৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। রোববার কোম্পানিটির শেয়ার ১১৯ থেকে ১২৭ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
 
লোকসানে থাকা আরেক প্রতিষ্ঠান বিডি অটোকারস। গত ১০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম ছিল ৪৩ টাকা ২০ পয়সা। ধারাবাহিক বেড়ে ৫ জানুয়ারি তা উঠে আসে ৯৬ টাকা ৮০ পয়সায়। রোববার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৭ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে এই কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে ২২৬ শতাংশের ওপর।
 
জেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আরএন স্পিনিং মিলসের শেয়ার দাম নভেম্বরের শুরুতে ছিল ১৭ টাকা। ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। অর্থাৎ দেড় মাসে আরএন স্পিনিংয়ের শেয়ার দাম বেড়েছে ১৯১ শতাংশের ওপর।
 
কিছুটা মুনাফা করলেও অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে ফাইন ফুডসের। গত ১৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ৯ টাকা ২০ পয়সা। এরপর দাম বাড়তে বাড়তে ১ জানুয়ারি তা ২৬ টাকা ২০ পয়সায় চলে আসে। রোববার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২৫ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৭৭ শতাংশের ওপর।
 
এভাবে গত আড়াই মাসে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯টি কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর মধ্যে ২১টিই জেড গ্রুপের কোম্পানি। এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্তও করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে দাম বাড়ার কোনো কারণ পায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
 
এর মধ্যে ৮টি কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে একাধিকবার তথ্য প্রকাশ করেছে ডিএসই। আর ৭টি কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপরও থেমে নেই কিছু কোম্পানির দাম বাড়ার পাগলা ঘোড়া। অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে গেলেও উচ্চমূল্যেই প্রতিদিন এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে।
 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা যাতে বুঝতে পারেন, কোন কোম্পানি ভালো না তার জন্যই ‘জেড’ গ্রুপ করা হয়েছে। জেড গ্রুপের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ হলো এর পিছনে কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে।
 
‘তবে এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও দায় আছে। তারা কেন এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগকারীদের বোঝা উচিত কেন তারা ভালো কোম্পানি রেখে খারাপ কোম্পানির শেয়ার কিনবেন?’ বলেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান জাগো নিউজকে বলেন, জেড গ্রুপের কিছু কোম্পানির শেয়ার দর যেভাবে বেড়েছে, তাতে বোঝা যায় এসব কোম্পানির পেছনে সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। এসব চক্র কৌশলে শেয়ার দর বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। গুজবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে।
 
তিনি বলেন, এমনও হতে পারে কিছু কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আইন অনুযায়ী তা প্রকাশের সময় হওয়ার আগেই কোনো চক্রের হাতে চলে যায়। ফলে ওই চক্র ফায়দা লুটতে সেই কোম্পানির শেয়ার কিনছে। অথচ এমন পরিস্থিতিতে ডিএসই থেকে কোম্পানির কাছে মূল্য সংবেদশীল তথ্য চাওয়া হলে, কোম্পানি জানাচ্ছে তাদের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কারণ আইন অনুযায়ী, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের সময় না হলে কোম্পানি থেকে বৈধ উপায়ে দেয়া হয় না।
 
গত আড়াই মাস ধরে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়া জেড গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলো হলো- কে অ্যান্ড কিউ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, বীচ হ্যাচারি, দুলামিয়া কটন, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিডি অটোকারস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ, মাইডাস ফাইন্যান্স, সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজ, সমতা লেদার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাষ্ট্রিজ, বাংলাদেশ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, শ্যামপুর সুগার মিলস এবং ইমাম বাট।
 
এর মধ্যে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর ২১ নভেম্বর ছিল ৫ টাকা ২০ পয়সা। এরপর ২ জানুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা ১০ পয়সায়। রোববার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকায়। অর্থাৎ দেড় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৯২ শতাংশের ওপর।
 
মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর ২৪ নভেম্বর দাম ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা। রোববার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ১২ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ দেড় মাসে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার দাম বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ।
 
এছাড়া ইমাম বাটনের শেয়ার দাম ২০৭ শতাংশ, শ্যামপুর সুগার মিলসের ২৫৫ শতাংশ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্সের ১৭৫ শতাংশ, কে অ্যান্ড কিউ’র ১৬৬ শতাংশ, পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৪৯ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজের ১৭৭ শতাংশ, মাইডাস ফাইন্যান্সের ১৭১ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ১৫৮ শতাংশ, অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজের ১৭২ শতাংশ, বাংলাদেশ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের ১৫০ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ১৪৯ শতাংশ, বীচ হ্যাচারির ১৪৮ শতাংশ, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ১৬০ শতাংশ, দুলামিয়া কটনের ১৪৩ শতাংশ এবং সমতা লেদারের ১৪৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।
 
এর মধ্যে জিল বাংলা সুগার মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস, ইমাম বাটন, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিষ্টেমস, এইচআর টেক্সটাইল, সোনারগাঁও টেক্সটাইল এবং ড্রাগণ সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিংয়ের অস্বাভাবিক দাম বাড়া নিয়ে একাধিকবার তথ্য প্রকাশ করেছে ডিএসই।
 
আর রহিমা ফুড, বিডি অটোকারস, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ, ঝিল বাংলা সুগার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং শ্যামপুর সুগার মিলসের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
 
অস্বাভাবিক দাম বাড়ার তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, মালেক স্পিনিং মিলস, মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং মিলস, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, জিবিবি পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, সিমটেক্স, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং, এইচআর টেক্সটাইল, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, এ্যাপোলো ইস্পাত, আইসিবি, বেক্সিমকো, বিডি ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল টি, রংপুর ফাউন্ড্রি, আরগন ডেনিমস, নাভানা সিএনজি, ইফাদ অটোস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, জিপিএইচ ইস্পাত, শমরিতা হসপিটাল, পেনিনসুলা চিটাগাং, গোল্ডেন সন, মেঘনা সিমেন্ট, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ডেফোডিল কম্পিউটার্স, এমারেল্ড অয়েল, গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, আরএসআরএম স্টিল, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, এবি ব্যাংক, শাশা ডেনিমস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস।
 
এমএএস/ওআর/পিআর