আয়ের অর্থ পুনঃবিনিয়োগের আহ্বান আহসান খান চৌধুরীর
শিল্প প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ ব্যাংকে বা নিজের কাছে পুঞ্জীভূত না রেখে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের (পুনঃবিনিয়োগ) আহ্বান জানিয়েছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ সরকার নগদ সহায়তা দিচ্ছে। সরকারের এ অর্থসহায়তা ব্যাংক বা নিজের কাছে পুঞ্জীভূত না রেখে নতুন নতুন কারখানা তৈরি করতে হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-এর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ‘বাংলাদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
নিজের বাবা ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর জীবনী তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের অন্যতম আমজাদ খান চৌধুরী। তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠানটির বেতনভুক্ত কর্মকর্তা ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের আয় ঘরে না নিয়ে তিনি নতুন শিল্প-কারখানা গড়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার সব অর্জন দেশের মাটিতে বিলিয়ে দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ আজ এত বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ সরকার নগদ সহায়তা দিচ্ছে। সরকারের এ অর্থসহায়তা ব্যাংক ও নিজের কাছে পুঞ্জীভূত না করে নতুন নতুন কারখানা তৈরি করতে হবে। যেমনটা করে গেছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খান চৌধুরী। তিনি (আমজাদ খান চৌধুরী) যা আয় করেছেন তা দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রফতানিতে অনেক দেশে আমরা (বাংলাদেশ) ডিউটি ও কোটা-ফ্রি সুবিধা পাচ্ছি। এ সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের কম মূল্যে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স (কারখানার নিরাপত্তা ও উন্নত কর্মপরিবেশ) নিশ্চিত করতে হবে।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমরা কৃষিপ্রধান দেশ। শিল্প-কারখানায় আমাদের বিপ্লব ঘটছে। কৃষি সেক্টরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। আগে কৃষকরা নিজেদের জন্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করতো, এখন তারা ভোক্তাদের উপযোগী খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করছে। কৃষির সঙ্গে আমাদের অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিবির সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রয়েছে, তা বোঝা যায় না। তবে আমারা কয়েকটি ফুড প্রোডাক্টস নিয়ে কাজ করি। এর মধ্যে আম, আনারস ও পেয়ারা অন্যতম।
‘আমাদের পেয়ারার মান ভালো তাই এর চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া রয়েছে ভেজিটেবল, টমেটো, আলু, কাসাবা। এর মধ্যে আলুসহ আলু থেকে তৈরি করা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য বেশ চাহিদা রয়েছে’ -বলেন তিনি।
চাল রফতানির বিষয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, এক সময় বাংলাদেশের চাল রফতানি হবে শুনলে সবাই অবাক হতো। এখন আমরা চিনিগুড়া চাল রফতানি করছি। ডেইরিতে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। প্রাণ, ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি এ খাতের পণ্য উৎপাদন ও রফতানি করছে। আমের জুস রফতানিতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া এখন আনারস ও পেয়ারার প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি করছি। বিদেশে যার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
‘চতুর্থ বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৬’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে আমাদের এই ফুডপ্রোর মাধ্যমে জিনিসপত্র চিনতে পারবেন। যারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত আছি আমাদের পণ্য সামগ্রীগুলো ভোক্তার সামনে উপস্থাপন করছি। আমরা এই ফুডপ্রোর মাধ্যমে বাংলাদেশে অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির কালচার গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক পণ্য ভোক্তা সাধারণের হাতে তুলে ধরতে পারি আমরা সে চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি আরো বেশি পণ্য সম্ভার নিয়ে দেশের বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও উপস্থিত হতে পারবো।
এসআই/এমএসএস/আরএস/এমএস