এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আরএনডি করছে ওয়ালটন
প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ (আরএনডি) প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে ওয়ালটন। পণ্যের গুণগত উচ্চমান নিশ্চিতকরণ এবং পণ্য নিয়ে নিয়মিত গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষে ওয়ালটন এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী নিজেদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষে ওয়ালটন গবেষণা ও উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করছে।
জানা গেছে, ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে ৪ শতাধিক দেশি-বিদেশি দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী কাজ করছেন। গত কয়েক মাসে এই বিভাগের জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। বৃহৎ আকারে সমন্বিত গবেষণার পাশাপাশি প্রতিটি পণ্য ভিত্তিক গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ চালু করা হয়েছে। উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায় গভীরভাবে পণ্যমান যাচাই করা হচ্ছে।
ওয়ালটন বাংলাদেশের গাজীপুরে নিজস্ব কারখানায় উচ্চমান সম্পন্ন, পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন করছে। ওয়ালটন ব্র্যান্ডের উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোটরসাইকেল ও এয়ারকন্ডিশনার। কঠোরভাবে পণ্যের উচ্চমান নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত গবেষণার ফলে একদিকে পণ্যমান বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে উৎপাদন খরচ। বাড়ছে ক্রেতাদের আস্থা। ফলে এই বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অভ্যন্তরীণ বাজারে অতি অল্প সময়ের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। দ্রুত বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে।
জানা গেছে, আকর্ষনীয় মডেলের ব্যয় সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন ও উন্নয়নের লক্ষে ওয়ালটনের আরএনডিতে নিয়োজিত প্রকৌশলীরা স্যামসাং, সিমেন্স, প্যানাসনিক, এলজির মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনী ধারণা বিনিময় করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৫ সালে ওয়ালটন আরএনডি (রির্সাচ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। মাত্র দশ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আরএনডিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
ওয়ালটনের আরএনডি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. মঈনুল হক বলেন, আরএনডি হলো যেকোনো উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। নিয়মিত গবেষণায় নতুন নতুন ডিজাইনের মান সম্পন্ন পণ্য উৎপদানই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারি ও দক্ষ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে ওয়ালটন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আরএনডি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। তিনি যোগ করেন, প্রধানত আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের লক্ষে ওয়ালটন আরএনডিতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে।
বর্তমানে ওয়ালটনে উৎপাদনভিত্তিক ৫টি এবং প্রডাক্ট সাপোর্টভিক্তিক ৫টি আরএনডি সেকশন রয়েছে। যাতে কাজ করছেন ৮৫ জন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী। এছাড়া পণ্যভিত্তিক প্রতিটি বিভাগের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন আরও ৩ শতাধিক প্রকৌশলী ও টেকনেশিয়ান।
ওয়ালটনের প্রকৌশলীরা প্রতিনিয়ত জাপান, কোরিয়া, জার্মানী, ইটালি, তাইওয়ান, চীন ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছেন।
প্রকৌশলী মো. মঈনুল হক বলেন, উচ্চমান সম্পন্ন, পরিবেশবান্ধব, এনার্জি সেভিং এবং দীর্ঘস্থায়ী পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে ওয়ালটন নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এরইমধ্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের আরএনডি বিভাগ উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন ও কাঁচামাল তৈরিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক সেকশনের প্রকৌশলীরা পলিউল ব্লেডিং, ফ্লেক্সিবল ফোম, হটমেল্ট গ্লু, থিনার, এ্যালুমিনিয়াম ফয়েলটেপ ও বিওপিপি টেপ উৎপাদন করছে যা আগে আমদানি করা হতো।
বর্তমানে আমদানিকৃত কয়েক প্রকারের কাঁচামাল যেমন পিই ফোম, মাস্টার বেচ, ইঞ্জিন প্লাস্টিক, টাইল্স এবং গ্লু এখানেই উৎপাদন করার লক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে বেশকিছু অত্যাধুনিক মেশিন নিয়ে এসেছে।
ফ্রিজের ক্ষেত্রে ওয়ালটন ব্যবহার করছে ইনভার্টার টেকনোলজি। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ফ্রিজের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ বিদ্যুত সাশ্রয় হচ্ছে।
ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে একটি শক্ত অবস্থান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে তাদের আরএনডি বিভাগ কাজ করছে। ফলে ইতোমধ্যে ওয়ালটন সৌদি স্ট্যান্ডার্ডস, মেট্রোলজি অ্যান্ড কোয়ালিটি অর্গানাইজেশন (সাসো) থেকে টেস্টিং সার্টিফিকেট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সার্টিফিকেট অর্জনের ফলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবদেশে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পণ্য রফতানি সহজতর হলো।
ওয়ালটনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী রাকিবুল হোসেন আহমেদ বলেন, পণ্য রফতানিতে ভারত, অষ্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেস্টিং সার্টিফিকেট অর্জনের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি শিগগিরই আরএনডি তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সার্টিফিকেট অর্জনে সক্ষম হবে। বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া উপযোগী করে পণ্য তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তিগতভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আরএনডির গুরুত্ব অপরিসীম।
রাকিবুল হোসেন আরো বলেন, একসময় বাংলাদেশে প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভাব ছিলো। ফলে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা বিদেশে চলে যেতেন। মেধা পাচার হতো। এখন ওয়ালটনের মত প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান প্রকৌশলীদের জন্য ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় প্রকৌশলীরা এখন দেশীয় প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। সর্বোপরি শিল্পায়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এমএএস/পিআর