প্রথম রমজানেই বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম
শুরু হয়েছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজান। আর এ মাসকে কেন্দ্র করে লাগামহীনভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দর। বিশেষ করে ইফতারের অনুষঙ্গ বেগুনের দামে ‘আগুন’ লেগেছে। ইতোমধ্যে ১২০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে সবজিটির দাম। এছাড়া কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে শশা, কাঁচামরিচ, লেবুসহ সব ধরনের সবজির দাম। পাশাপাশি ছোলাসহ সকল প্রকার ডালের বাজারও লাগামহীন।
মঙ্গলবার রাজধানীর শান্তিনগর, মতিঝিল, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ী, কাপ্তানবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও অগ্রিম মওজুদ প্রবণতার জেরে দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ সরবারহ বেশি থাকা সত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। পাইকারী বাজারে দাম বাড়ায় তাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলছেন খুচরা ব্যবসায়িরা। আর নিত্যপণ্যের লাগামহীন এ দামে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
জানা গেছে, রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে তার সবগুলিরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে তিন দিন আগেও যে লম্বা বেগুন বিক্রি হতো ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকায় মঙ্গলবার (৭ জুন) সকালে বেড়ে দাড়িয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়।
তাছাড়া রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেপে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা, শশা ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, লেবু প্রতিহালি মান ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধনিয়া পাতা ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছোলা : ব্যবসায়ীরা আগেই বলেছিলেন রমজানে ছোলার দাম ১০০ টাকা ছাড়াবে, হয়েছেও তাই। বাজারে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ভাল মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। এছাড়া মানভেদে প্রতিকেজি ছোলা ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা খোলা বাজারে ট্রাক সেলে প্রতিকেজি ৭০ টাকায় বিক্রি করছে।
চিনি : খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫ টাকা। টিসিবি প্রতিকেজি চিনি দেশী চিনি ৪৮ টাকায় বিক্রি করছে।
ডাল : খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অ্যাংকর (বুটের) ডাল ৬০-৬২ টাকা, খেসারির ডাল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, বুটের ডালের বেসন ১২০ টাকা, অ্যাংকর ডালের বেসন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি মশুর ডাল ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সায় বিক্রি করছে।
পেঁয়াজ : খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রসুন : বাজারে চীন থেকে আমদানি করা রসুন ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় এবং দেশী রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস : সিটি করপোরেশন থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪২০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও দুয়েকটি বাজারে তা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ব্রয়লার মুরগি: বাজারে দুয়েকদিন আগের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সয়াবিন তেল : প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় (সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়েছে)। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৪৫৫ টাকায়। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়। তবে সরকারী সংস্থা টিসিবি প্রতিলিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছে ৮০ টাকায়।
কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, আসলে বাজার সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকার বলেছে রমজানের আগে বাজারে পন্যের দাম বাড়বে না, অথচ সব ধরণের পন্য ঠিকই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও দুয়েকটি বাজারে মনিটরিং করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম বাড়তি হলেও মনিটরিং কমিটির খুব বেশি তৎপরতা নেই। এই সুযোগে পণ্যের অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে ব্যবসায়িরা। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভোক্তাদের।
বেসকারি চাকুরিজীবী আল আমিন বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের সরবারহ কম নেই তারপরও দাম বাড়ছে। সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম চড়া। রমজান উপলক্ষে অতিউৎসাহী হয়ে সব পণ্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এখন মাসের বেতন দিয়ে খরচ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বলেছিল রমজানের আগে বাজারে পন্যের দাম বাড়বে না অথচ ব্যবসায়িরা ঠিকই দাম বেশি নিচ্ছে। আসলে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যদি সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সঠিক নিয়েমে বাজার মনিটরিং করতো তাহলে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তো না।
শান্তিনগর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কামরুল বলেন, প্রতি রমজান মাসেই বেগুন, কাঁচামরিচ, শসাসহ কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এর সুবাদে পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দেয়। আর বেশি দামে মাল কিনে আমরাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। পাইকাররা দাম বাড়ায়, আমাদের কিছু করার নাই।
অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সামান্য দাম বাড়ালেই খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি সরকার সঠিকভাবে মনিটরিং করলেই বুঝতে পারবে পাইকারী ও খুচরা বাজারে তফাৎ কি পরিমাণ। আর এতে ভোক্তারা সুফল পাবে বলে মনে করেন তিনি।
এসআই/এমএমজেড/পিআর