মিষ্টি আপেল-আঙুর দামে ‘তিতা’

দেশের বাজারে আপেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পর এখন কিছুটা কমেছে। মান ও বাজারভেদে পাইকারিতে আপেলের দাম কেজিতে কমেছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এরপরও বর্তমানে যে দামে আপেল বিক্রি হচ্ছে, তা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া বেশ কষ্টের। ফলে দাম কমার পরও মিষ্টি আপেল ক্রেতাদের কাছে যেন তিতা লাগছে। শুধু আপেল নয় আমদানি করা সব রকমের ফলের দাম এখন বাজারে বেশ চড়া।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। কিছুদিন আগে এই আপেল ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। গালা আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৮০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ছিল। কিছুদিন আগে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বড় বড় আপেল এখন ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আপেলের দাম কমলেও অন্যান্য আমদানি করা ফলের দাম কমেনি। আঙুর, কমলা, মাল্টা, আনারসহ সব ধরনের আমদানি করা ফল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কালো আঙুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। সবুজ আঙুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কমলা। বেদানার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ায়। সে তালিকায় ছিল এসব আমদানি করা ফল। শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর কারণে বিভিন্ন ফলের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ফলের বাড়তি দামে লাগাম টানতে এবং পবিত্র রমজানে ফলের মূল্য জনগণের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৮ মার্চ তাজা ফল আমদানিতে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে সরকার। সেই সঙ্গে ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া ফল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এরপরও রোজার পুরো সময়জুড়ে সব ধরনের আমদানি করা ফল চড়া দামেই বিক্রি হয়। অবশ্য ঈদের পর এখন বাজারে আপেলের দাম কিছুটা কমছে। কিন্তু অন্যান্য ফল আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে কেউ কেউ দোকানে ফল কিনতে গিয়ে দাম শুনে না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
রামপুরা বাজারে কয়েকটি দোকানে ফলের দাম শুনে না কিনেই মলিন মুখে ফিরে যাচ্ছিলেন মো. ইসমাইল হোসেন। যাওয়ার সময় তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো। এ জন্য ফল কিনতে আসছিলাম। কিন্তু কোথাও সাড়ে তিনশ টাকার নিচে ভালো আপেল নেই। আঙুরের কেজি ৫৫০ টাকা। কমলা সাড়ে তিনশ টাকা। আমার কাছে ফলের দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। তাই ফল না কিনে চলে যাচ্ছি। আত্মীয়ের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাবো।
ফলের দাম নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন খিলগাঁওয়ে ফল কিনতে আসা আলী হোসেনও। তিনি বলেন, রোজার ভেতরে ফলের চাহিদা থাকায় সব ধরনের ফলের দাম বেড়ে যায়। এরপর সরকার শুল্ক, ভ্যাট কমায়। কিন্তু তারপরও ফলের দাম কমেনি। আপেল, কমলা, মাল্টা কোনো কিছুই এখন সাড়ে তিনশ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। তাহলে শুল্ক, ভ্যাট কমিয়ে লাভ হলো কী? সব ব্যবসায়ীদের কারসাজি। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে ফল বাড়তি দামে বিক্রি করছে। সরকারের উচিত বাজারে মনিটরিং বাড়ানো এবং কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
সেগুনবাগিচায় আপেল কিনতে আসা মো. মশিউর রহমান বলেন, দোকানি বলছে আপেলের দাম কমেছে। এরপরও কেজি চাচ্ছে সাড়ে তিনশ টাকা। এক কেজি আপেল যদি সাড়ে তিনশ টাকা হয়, এটাকে কি দাম কমা বলে। শুধু আপেল না সব ধরনের ফলের অস্বাভাবিক দাম। কোনো আমদানি করা ফলের কেজি এখন তিনশ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের টাকা আছে, তারা এত দাম দিয়ে ফল কিনে খেতে পারবেন। নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে ফল কিনে খাওয়া সম্ভব না।
বিজ্ঞাপন
ফকিরাপুল বাজারে আপেল কিনতে আসা গার্মেন্টসকর্মী আলেয়া বেগম বলেন, অনেকদিন আপেল খাই না, তাই বাজারে এসেছি আপেল কেনার জন্য। এক কেজি আপেলের দাম চাচ্ছে সাড়ে তিনশ টাকা। আর একটা আপেলের দাম চাচ্ছে ৫০ টাকা। আমরা গরিব মানুষ এত দাম দিয়ে আপেল কিনে খাবো কীভাবে? তাই আপেল না কিনে ফিরে যাচ্ছি। যাদের টাকা আছে, তারাই আপেল খাক।
এদিকে খিলগাঁওয়ে ফল বিক্রি করা মো. মিনারুল হোসেন বলেন, রোজার সময় সব ধরনের ফলের দাম বাড়ে। তবে এখন আপেলের দাম কিছুটা কমেছে। সামনে হয়তো অন্যান্য ফলের দামও কিছুটা কমবে। রোজায় আপেলের কেজি সাড়ে চারশ টাকা ছিল। এখন সেই আপেল সাড়ে তিনশ টাকা বিক্রি করছি। কেজিতে আপেলের দাম একশ টাকা কমে গেছে।
বিজ্ঞাপন
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, একশ টাকা কমার পরও এখনো আপেলের কেজি সাড়ে তিনশ টাকা। কালো আঙুরের কেজি ৫৫০ টাকা। কমলার কেজি সাড়ে তিনশ টাকা। তার মানে বাজারে ফলের দাম কম তা কিন্তু নয়। আর দাম বেশি হলে বিক্রি কম হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদেরও এখন বিক্রি কম হচ্ছে। তাছাড়া এখন তরমুজের ভরা মৌসুম। সবকিছু মিলে আমদানি করা ফলের বিক্রি এখন কিছুটা কম।
সেগুনবাগিচায় ফল বিক্রি করা মো. আক্কাস বলেন, গত কয়েকদিন আপেলের দাম কমেছে। অন্যান্য ফলের দামে পরিবর্তন আসেনি। রোজার ভেতরেই সব ধনের ফলের দাম বাড়ে। দাম বেশি হওয়ার কারণে এখন প্রয়োজন ছাড়া মানুষ আমদানি করা ফল খুব একটা কিনছে না। এক কার্টন আপেল বা কমলা বিক্রি করতে ১০-১২ দিন লেগে যাচ্ছে।
এমএএস/এমআইএইচএস/এমএস
বিজ্ঞাপন