ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বাড্ডার মার্কেটগুলোতে জমেনি ঈদের কেনাকাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২৫

রাজধানীর বাড্ডার মার্কেটগুলোতে এখনো ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠেনি। অনেকটা অলস সময় কাটছে বিক্রেতাদের। দুপুরের আগে মার্কেটে তেমন ক্রেতার দেখা মিলছে না। বিকেলের দিকে যারা আসছেন, তারাও অনেকে দাম-দর করে চলে যাচ্ছেন। কমবেশি যেটুকু বিক্রি হচ্ছে, তা ইফতারের পর থেকে রাত পর্যন্ত। তবে তাতে সন্তুষ্ট নয় বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমল, হল্যান্ড সেন্টার শপিং কমপ্লেক্স, লুৎফুন শপিং কমপ্লেক্সসহ বাড্ডা এলাকার বেশ কয়েকটি বড় মার্কেট ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বাড্ডার মার্কেটগুলোতে জমেনি ঈদের কেনাকাটা

বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আর মাত্র দুই সপ্তাহের মতো বাকি। এখন বিক্রি ও ক্রেতাদের ভিড় যেমনটা হওয়ার কথা তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। তবে আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) থেকে ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সুবাস্তুর বিক্রেতারা

বাড্ডা এলাকার বড় মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম সুবাস্তু নজর ভ্যালি। পাঁচতলা এ শপিংমলে বছরজুড়েই ক্রেতাদের বেশ আনাগোনা দেখা যায়। ঈদ এলে বাড্ডা এলাকার মানুষ কেনাকাটার জন্য একবার হলেও সুবাস্তু নজর ভ্যালিতে ঢুঁ মারেন। এখানে কাপড়, জুতা, জুয়েলারি, কসমেটিকসসহ সব পণ্যের দোকান রয়েছে।

সুবাস্তুর মার্কেটের দুটি ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই নিচতলায় চোখে পড়বে চশমা, জুতা, ক্রোকারিজ ও থানকাপড়ের শতাধিক দোকান। মার্কেটে সরেজমিন দেখা যায়, নিচতলার এ দোকানগুলোতে তেমন ভিড় নেই। অল্পসংখ্যক নারী ক্রেতাকে থ্রি-পিস, বোরকা, ওড়নাসহ পোশাক বানাতে থানকাপড় কিনতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

 বাড্ডার মার্কেটগুলোতে জমেনি ঈদের কেনাকাটা

জুতার দোকানগুলোতেও তেমন ভিড় নেই। কিছু দোকানে শুধু শিশুদের জন্য ক্রেতাদের কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। সেখানে সবচেয়ে বড় জুতার দোকান লোটাস কালেকশন। দোকানমালিকের ছোট ভাইকে দেখা গেলো ম্যানেজারের চেয়ারে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুতার বিক্রি একেবারেই কম। বাচ্চাদের জন্য কেউ কেউ কিনতে আসছেন। কিছু নারী ক্রেতাও পাচ্ছি। তবে সবমিলিয়ে সাধারণ সময়ের মতো বিক্রি। ঈদের মার্কেট বোঝার উপায় নেই।’

তার পাশেই ফিট সুজ। দোকানের সামনে অলস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে মালিক মো. সজীব। তিনি বলেন, ‘বেচা-বিক্রি নেই। কাল-পরশু থেকে বাড়ে কি না দেখি। লোকজন মার্কেটে এখনও তেমন ঢোকেনি (কেনাকাটা শুরু করেনি)।’

বিজ্ঞাপন

সুবাস্তুর দোতলায় কসমেটিকস, ব্যাগ, জুয়েলারি ও খেলনার দোকানের সমাহার। সেখানে অবশ্য ক্রেতাদের সরগরম উপস্থিতি। অধিকাংশই নারী ক্রেতা। কয়েকটি কসমেটিকস ও জুয়েলারি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের বিক্রি ভালো। সামনে আরও ভালো হবে।

কসমেটিকস কিনতে এসেছেন দুই বান্ধবী লাইজু ও শারমিন। তারা দুজনই কলেজপড়ুয়া। লাইজু বলেন, ‘আগে দুইদিন এসেও তেমন কিনতে পারিনি। আজকে কিছু জিনিস কিনেছি। আরও দু-একদিন হয়তো আসা লাগবে।’

সখের আঙিনা নামে কসমেটিকস দোকানের মালিক রুমানা ফেরদৌস বলেন, ‘এ সপ্তাহের শুরুর দিকেও বিক্রি খুব কম ছিল। গত দুইদিন একটু বেড়েছে। তবুও ঈদের বিক্রির যে চাপ, সেটা নেই।’

বিজ্ঞাপন

মার্কেটের তিন ও চারতলায় কাপড়ের দোকান। তিনতলায় শিশু ও নারীদের বেশ ভিড় দেখা যায়। এখানে দরদাম করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। তবে চারতলার দোকানগুলোর চিত্র ভিন্ন। সেখানে তুলনামূলক দামি কাপড় বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশই একদরের দোকান।

বাড্ডার মার্কেটগুলোতে জমেনি ঈদের কেনাকাটা

ড্রেস বক্সে দেখা গেলো উপচেপড়া ভিড়। ভেতরে প্রবেশ করে বিক্রেতা শাহজাহান আলমের সঙ্গে কথা হয়। তার ভাষ্য, ‘আল্লায় দিলে বিক্রি ভালা। আপনাদের দোয়া চাই, দোয়া করেন; বিক্রি আরও বাড়ুক।’

বিজ্ঞাপন

পাশেই আদিবা পাঞ্জাবি হাউজ। সেখানে অবশ্য কয়েক মিনিট দাঁড়িয়েও একজন ক্রেতাও দেখা গেলো না। দোকানের মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘পাঞ্জাবির বিকি ভালো না। দেখি সামনে কি হয়!’।

চারতলায় একদরের দোকান। সেখানে সবচেয়ে বড় দোকান অপূর্বা। মূলত নারীদের পোশাক বিক্রি করছে তারা। ছোটদের বিভিন্ন ফ্যাশনের ড্রেসে দোকানভর্তি। রয়েছে বড়দের পোশাকও। দোকানের মালিকের ছেলে অপূর্ব ব্যবসা সামলাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বিক্রি ভালোই। কিন্তু ঈদ সামনে রেখে তা যথেষ্ট নয়।’

পাঁচতলায় থাকা মোবাইল, ল্যাপটপসহ ইলেকট্রিক বিভিন্ন পণ্যের দোকানে অবশ্যই একেবারে ভিড় নেই। সেখানে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। দোকানি ও বিক্রয়কর্মীদের কাজের চাপও কম।

বিজ্ঞাপন

সুবাস্তু নজর ভ্যালির মার্কেট পরিচালনা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. হারুণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুবাস্তুতে নিরাপত্তার সমস্যা নেই। ক্রেতার খরা কিছুটা ছিল। সেটাও কেটে যাচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।’

হল্যান্ড-লুৎফুন কমপ্লেক্সে ক্রেতা খুব কম

মধ্যবাড্ডায় হল্যান্ড সেন্টার শপিং কমপ্লেক্স। দুপুরের দিকে প্রায় এক ঘণ্টা মার্কেটে ঘুরে খুব কমসংখ্যক ক্রেতা চোখে পড়ে। বিক্রেতাদের কেউ ঘুমিয়ে, কেউ মোবাইলে রিলস-ভিডিও দেখে সময় কাটাচ্ছেন। কাউকে দেখলে অনেকটা জোর করে শাড়ি, পাঞ্জাবি, কাপড় দেখাতে চাইছেন। অনেক সময় এক ক্রেতা নিয়ে চার দোকানির ডাকাডাকির প্রতিযোগিতাও চোখে পড়ে।

হল্যান্ড সেন্টারের দোতলায় ডায়মন্ড পয়েন্ট। দোকানে কোনো ক্রেতা নেই। মালিকসহ ছয়জন বিক্রয়কর্মী অলস বসে আছেন। দোকানের মালিক আব্দুল খালেক পাটোয়ারী বলেন, ‘একেবারেই বেচা-বিক্রি নেই। ক্রেতা আসছেই না বললেই চলে। আগামী সপ্তাহের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখা যাক, বিক্রি একটু হয় কি না।’

তিনি বলেন, ‘মার্কেটের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা খুব কম। ঈদে বিশেষ কোনো ছাড় বা লাকি কুপনসহ কোনো উদ্যোগও নেই। মার্কেটের অবস্থা খুব ভালো না।’ একইভাবে হতাশা প্রকাশ করেন জেসি শাড়ি সমাহারের ম্যানেজার ফজলুর রহমানও।

বাড্ডার মার্কেটগুলোতে জমেনি ঈদের কেনাকাটা

লেটেস্ট কালেকশনের মো. শান্ত বলেন, ‘অন্যবার এ সময়ে ক্রেতার চাপে দাঁড়ানোর সুযোগ পাই না। এবার ডেকে ডেকেও কাউকে পাচ্ছি না। আশা আছে, আগামী সপ্তাহটা ভালো যাবে।’

হল্যান্ড সেন্টারের প্রচার-প্রচারণা ও ঈদ উপলক্ষে আয়োজনের কমতি নেই বলে দাবি করেন মার্কেট কমিটির ম্যানেজার বি এইচ লিপন। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের দিকটা যেমন দেখছি, ক্রেতাদের দিকটাও দেখছি। ডামি পণ্য, খারাপ পণ্য যেন ক্রেতাদের না দেওয়া হয়, সেদিকে নজর রাখছি। ব্যবসাটা সঠিকভাবে হোক সেটা নিশ্চিত করছি। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার রেখেছি।’

ঈদের কেনাকাটার চাপ পড়েনি মধ্যবাড্ডা বাজার গলির মুখে অবস্থিত লুৎফুন শপিং কমপ্লেক্সেও। এ মার্কেটের নিচতলা ও দোতলায় প্রায় আড়াইশ দোকান রয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলেও সেখানে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। এখানে মূলত থ্রি-পিস, ওড়না, বোরখা, পাঞ্জাবি, শাড়ি, জুতা, জুয়েলারি বিক্রি হয়। স্বল্প থেকে মাঝারি দামে সেগুলো কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

নিউ দাদু সুজের বিক্রয়কর্মী মো. শরীফ বলেন, ‘বিক্রি নেই। সকাল থেকে এ পর্যন্ত দুই জোড়া বাচ্চার জুতা বিক্রি হয়েছে। ইফতারের পর হয়তো কিছু ক্রেতা আসতে পারে।’

লুৎফুন শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিক্রি হয়তো এখনো কম। দু-একদিন পর থেকে বিক্রির চাপটা বাড়বে। আমরা মার্কেটের পরিবেশ ভালো রাখছি। নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। ক্রেতারা এখানে এসে ঠকবে না, হেনস্থার শিকারও হবে না।’

এএএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

বিজ্ঞাপন