ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি

ইয়াসির আরাফাত রিপন | প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৩

# তিন মাসে খেলাপি কমলো ৬৪২ কোটি টাকা
# খেলাপির প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ
# ঋণ খেলাপি কমাতে দৃশ্যমান উদ্যোগ-অগ্রগতি নেই
# ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে
# ঋণ বিতরণ ও আদায়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে
# ঢালাওভাবে ছাড় নয়, হতে হবে আরও কঠোর

বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরও কমছে না ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। উল্টো তা বেড়েই চলেছে। যা এরই মধ্যে এ খাতের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। একবার কিছু কমছে তো আবার বাড়ছে। গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা ছিল পরের প্রান্তিকে তা কমে আসতে পারে। হয়েছেও তা-ই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা আগের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের চেয়ে ৬৪২ কোটি টাকা কম। তবে গত এক বছরের ব্যবধানে মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। ব্যাংক খাতের প্রধান এ সমস্যা মোকাবিলায় ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। খেলাপি সমস্যা দূর করতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দাতা ও গ্রহীতার ক্ষেত্রে একইভাবে রেগুলেশন প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগেরও পরামর্শ তাদের।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘পরিদর্শন দুর্বলতায়’ বেড়েছে খেলাপি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এটি গত বছরের (সেপ্টেম্বর প্রান্তিক-২০২২) একই সময়ের চেয়ে ২৩ হাজার এক কোটি টাকা বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। প্রান্তিকটিতে খেলাপি ঋণ দেশের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ডলার সংকট কাটাতে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণে ভর করেছে বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার বা ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে দেশ। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে আগামী ডিসেম্বরে

আর বছরের প্রথম প্রান্তিক গত জানুয়ারি-মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। সে হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে সবশেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেড়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: সব রেকর্ড ভেঙে খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ডলার সংকট কাটাতে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণে ভর করেছে বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার বা ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে দেশ। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে আগামী ডিসেম্বরে। কয়েক ধাপে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দেয়। শর্তে বলা হয়, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে এসেছে, যা বর্তমানে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ বন্ধে আমাদের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপও নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। খেলাপির যে চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রকৃত চিত্র এটা নয়। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ, আরও বড় হবে

আইএমএফের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। তবে বাস্তবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফের শর্তানুযায়ী, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আএমএফের হিসাবে মোট খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। খাত সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান না থাকায় খেলাপি বাড়ছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিকে ভালো চোখে দেখছেন না তারা।

আরও পড়ুন: রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ও অটোমেশনের ধীরগতিতে ‘অসন্তোষ’ আইএমএফের

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা নিতে হবে।

খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তেমন সফলতা দেখাতে পারছে না। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। খেলাপি কমাতে না পারলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শাখা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে।

গ্রাহককে ঋণ পরিশোধে বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও কোনো সুফল আসছে না। যে রেগুলেশন আছে সেটা কঠোরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। খেলাপিতে লাগাম টানতে এটা কঠোরভাবে করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়কে একই চোখে দেখতে হবে

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ বন্ধে আমাদের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপও নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। খেলাপির যে চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রকৃত চিত্র এটা নয়। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ, আরও বড় হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে ছাড় দেওয়া হলো, অন্য সময়ও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। মোট ঋণের কিছুটা পরিশোধ করলেই আর খেলাপি হচ্ছেন না, এমন সুবিধার পরও সুফল কতটুকু?

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ কখনো ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি

ড. জাহিদের ভাষ্য, গ্রাহককে ঋণ পরিশোধে বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও কোনো সুফল আসছে না। যে রেগুলেশন আছে সেটা কঠোরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। খেলাপিতে লাগাম টানতে এটা কঠোরভাবে করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়কে একই চোখে দেখতে হবে। এক কথায় এখানেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। ব্যাংক খাতে ঋণ আদায় হচ্ছে না, আবার বিতরণও হচ্ছে। এভাবে খেলাপি কমবে না।

ইএআর/এমকেআর/জেআইএম