ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

নীতি জটিলতায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রা পাচ্ছে না কৃষিপণ্য রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

করোনা মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছর ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছে কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত খাত। দেশের পোশাকশিল্পের পরে সবচেয়ে বেশি এটি। তবে বেশকিছু নীতি জটিলতায় এ খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেগুলো সমাধান হলে কৃষিপণ্য রপ্তানি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

‘কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের অগ্রগতির জন্য সীমাবদ্ধতা চিহ্নিতকরণ এবং পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এপিবিপিসি) ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) উদ্যোগে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম। সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও বাপার প্রশাসক জিন্নাত রেহানা।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট ডিন প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন। তিনি তার প্রবন্ধে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বেশকিছু নীতি জটিলতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ খাত এগিয়ে গেলেও সেভাবে সহায়তা নেই। যেটা পোশাক ও ওষুধ শিল্প পাচ্ছে।

প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন বলেন, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির জন্য বিশেষ ক্যাশ ইনসেনটিভ (নগদ প্রণোদনা) নেই, যা বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য রয়েছে। এ খাতে ব্যবসা বা বিনিয়োগে লাইসেন্স পেতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স নবায়নও সহজলভ্য নয় ৷ খাদ্যপণ্য কারখানা নির্মাণে পর্যাপ্ত নীতিসহায়তা ও ব্যাংক লোন সহজলভ্য নয়।

তিনি জানান, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ সহজ না হওয়ার জন্য বাইরে বিনিয়োগে ট্যাক্স হলিডে সুবিধা নেই। কৃষিপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়নি। বাণিজ্য বাড়াতে দূতাবাসগুলোর পর্যাপ্ত উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে।

বেলাল হোসেন আরও বলেন, রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে সম্ভাব্য দেশগুলোতে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের ঘাটতি রয়েছে এ খাতে। সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি প্রয়োজন, সেটা কিছু ক্ষেত্রে থাকলেও কার্যকর নয়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বা কোটাযুক্ত প্রবেশের ব্যবস্থা নেই। সব কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বন্ড লাইসেন্স সুবিধা নেই এ খাতে।

তিনি বলেন, কোম্পানির অধীনে বন্ড লাইসেন্স প্রদান এবং একই সঙ্গে বন্ড ও নগদ প্রণোদনা পান না এ খাতের উদ্যোক্তারা। এছাড়া বন্দরে পণ্য খালাস ও অন্যান্য কাজের দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। অর্গানিক ও মানসম্মত কাঁচামাল উৎপাদনে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। দিনে দিনে চাষাবাদযোগ্য জমিও কমে আসছে। এ অবস্থায় কম জমিতে অধিক ফলন পেতে কৃষকদের নীতিসহায়তা দেওয়া দরকার।

সেমিনারে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম বলেন, সব নীতিসহায়তা পেলে এ খাতের মাধ্যমে পোশাকশিল্পের ওপর একক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করছে। তবে আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প আরও এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে বেশি ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জিন্নাত রেহানা জানান, সরকার আন্তরিক। কীভাবে পণ্য আরও বেশি বহুমুখী করা যায় সেটা তারা দেখবেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহম্মেদ ইসলাম মোস্তফা। টেকনিক্যাল সেশন সঞ্চালনা করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল। সেমিনারে দেশের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

নীতি জটিলতায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রা পাচ্ছে না কৃষিপণ্য রপ্তানি

কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সেমিনারে তাদের মতামত তুলে ধরেন

বক্তারা বলেন, এখন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য পরীক্ষার জন্য একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার প্রয়োজন। সরকার পূর্বাচলে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করছে, কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ। এছাড়া রপ্তানির জন্য কার্যকর ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রয়োজন।

তারা বলেন, দ্রুত ফাইটোস্যানিটারি সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ওই প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি অ্যাক্রেডিটেডের ব্যবস্থা করা দরকার। বন্দরে ওয়্যারহাউজ নেই। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতপণ্য নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ দরকার।

বক্তারা আরও বলেন, এখন রপ্তানি বাড়াতে হলে উত্তম কৃষিপদ্ধতি (গ্যাপ) অনুসরণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান হালাল খাদ্যের বাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে দ্রুত হালাল আইন তৈরি এবং হালাল নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা দরকার। এছাড়া দ্রুত কাঁচামালের দাম বাড়ছে, সেই তুলনায় প্রক্রিয়াজাত পণ্যের দাম বাড়ছে না। এ কারণে অনেকে লোকসান করছেন। সেটি কমানোর জন্য সহায়তা প্রয়োজন।

সেমিনারে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রক্রিয়াজাতকারীদের সবাই খরচের চাপে রয়েছেন। আমরা কনটেইনার পচ্ছি না। ক্ষেত্রবিশেষে ৫০০ গুণ পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে। সরকারের দেখা উচিত কীভাবে সেটা সমাধান করা যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কাজ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পণ্য বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে আমরা যেসব কৃষিপণ্য পাচ্ছি, সেগুলোই প্রক্রিয়াজাত করছি। কিন্তু আমাদের বিশ্ব বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রয়োজন। উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেসব পণ্যকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, আমাদের গ্যাপ সার্টিফিকেট নেই। নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদন কম। ফলে রপ্তানিতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। সবকিছু রপ্তানি করতে পারি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের পর বিদেশে সেটার মান নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাতের জন্য সোর্স (উৎস) থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। কেউ অসততার জন্য খারাপ পণ্য দিচ্ছেন, কেউ সচেতনতার অভাবে সেটা করছেন। কিন্তু এ দায় প্রক্রিয়াজাতকারীকে নিতে হচ্ছে।

রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাজে লাগানো যেতে পারে। তাহলে বিভিন্ন দেশে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং ভালো হবে। মোটকথা সরকারকে কৃষি উৎপাদন থেকে রপ্তানি পর্যন্ত সবক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে হবে, যোগ করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল।

এনএইচ/কেএসআর/এসএইচএস/জেআইএম