রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: পেরিয়েছে ৮ বছর, তবুও তারা গৃহহীন!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। পরে ২০১৮ সালের এপ্রিলে শাহজাদপুর মহিলা কলেজে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়। এভাবে আট বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। এতে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মচারী ও স্থানীয়রা। এ নিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের অধীনে ৫টি বিভাগ চালু রয়েছে। এতে এক হাজার দুইশ’র অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে শাহজাদপুর মহিলা কলেজ, সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও মওলানা ছাইফউদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজের শ্রেণিকক্ষে এবং দুটি ভবন ও একটি কনভেনশন সেন্টারের জায়গা ভাড়া নিয়ে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার শাহজাদপুর মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে কলেজের কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার জন্য একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে। তবে তারা নিরুপায় হয়ে কোনো উত্তর দেননি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এভাবেই চলছে কার্যক্রম-ছবি জাগো নিউজ
- আরও পড়ুন
- স্থায়ী ক্যাম্পাস চেয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্থাপন’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা হয়েছিল ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এরপর এটি পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রথমে পুনর্গঠিত প্রস্তাবনা করা হয় ২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এভাবে সাতবার বাজেট পুনর্গঠিত প্রস্তাবনার পর অষ্টমবার ৫৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা পুনর্গঠিত ডিপিপি বাজেট প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদের সময় হবে ১ মার্চ ২০২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৯ সাল পর্যন্ত। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়ার সই করা একটি পত্রের মাধ্যমে এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২২৫ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ একর জমির ওপর যখন-তখন ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত আট বছরে একটি ইটের টাকাও বরাদ্দ মেলেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহজাদপুর মহিলা কলেজটির চারতলা একটি ভবনের তিনটি তলা ব্যবহার করছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এই ভবনের তিনতলায় ছোট্ট একটি কক্ষে কয়েকটি চেয়ার-টেবিল রাখা। সেখানে বসেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি, সংগীত ও বাংলা বিভাগের ২০ জন শিক্ষক। দেখেই বোঝা যায়, কক্ষটিতে কোনোমতে বসা গেলেও এখানে বসে পাঠদানের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়।
ক্যাম্পাসের দাবিতে রাজপথে শিক্ষার্থীরা-ছবি জাগো নিউজ
বিজ্ঞাপন
- আরও পড়ুন
- ৮ বছর পর ঢাবি-সাত কলেজ ‘বিচ্ছেদ’, শিক্ষা কার্যক্রমের কী হবে?
- ৭ কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রক্রিয়া জটিল: শিক্ষা উপদেষ্টা
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে এখন সাতটি বর্ষের (ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। সংগীত ও বাংলা বিভাগ তো রয়েছেই। কিন্তু এসব বিভাগের ক্লাসের জন্য শ্রেণিকক্ষ মাত্র একটি। তাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন শিক্ষকরা। নেই কোনো সেমিনার কক্ষ।
অন্যদিকে সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজের নিচতলার একটি কক্ষে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এর আকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরির সমান। আবার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন এই গ্রন্থাগার থেকে অনেকটা দূরে। সেখানে গিয়ে জানা গেলো দুটি ভবনে ভাড়া করে চলছে প্রশাসনিক কাজ। সেখান থেকে অনেকটা দূরে ‘সীমান্ত কনভেনশন সেন্টার’ ভাড়া নিয়ে সম্প্রতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং মিলনায়তনের কার্যক্রম চালু করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। পার্শ্ববর্তী মওলানা ছাইফউদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজের একাংশে চলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের পাঠদান।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে এখন সাতটি বর্ষের (ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। সংগীত ও বাংলা বিভাগ তো রয়েছেই। কিন্তু এসব বিভাগের ক্লাসের জন্য শ্রেণিকক্ষ মাত্র একটি। তাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন শিক্ষকরা। নেই কোনো সেমিনার কক্ষ।
এভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আট বছর ধরে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসিক হল না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বাসাভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এতেও তাদের বাড়ছে খরচ।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্থানীয়রা-ছবি জাগো নিউজ
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় বছরে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার টাকা। এই হিসাব অবকাঠামো উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি কেনার ব্যয় বাদে। টাকা যায় মূলত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যয়ে।
সংগীত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের শিক্ষার সুযোগ থাকা দরকার, তার কিছুই নেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুথিগত পড়াশোনা হলেও ব্যবহারিক শিক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষের সংকট তো রয়েছেই। এভাবেই তিন বছর পেরিয়ে গেলো।
বিজ্ঞাপন
- আরও পড়ুন
- মবের মধ্যে ঢুকে মারামারি থামানোর কথা বলতে হেডম লাগে
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না সাত কলেজ
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সামিয়া আকতার জাগো নিউজকে জানান, আমাদের আবাসন সংকট চরমে। বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। এভাবে থাকাটা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো নিরাপত্তা ছাড়া রাতে আমাদের লাইব্রেরিতে পড়তে যেতে হয়। এতে বখাটেদের দ্বারা নানান রকম ইভটিজিং ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অথচ স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলে এসব সমস্যা হতো না। তবে আমাদের এই দাবি সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না। এবার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
জমি পড়ে থাকলেও কাজের খবর নেই-ছবি জাগো নিউজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নুসরাত জাহান ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক দাবি করে বলেন, ক্যাম্পাস না থাকায় শুধু শিক্ষার্থী নয়, তারাও নানান সমস্যায় ভুগছেন। ক্লাসরুম, শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা ও জ্ঞান চর্চার স্থান না থাকায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান করতে পারছেন না তারা। এছাড়া খেলাধুলা ও ক্যান্টিন না থাকার সমস্যা শিক্ষার্থীদের তো রয়েছেই।
বিজ্ঞাপন
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে যেনতেনভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ হচ্ছে। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা কার্যত ঠকছেন। এজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।
শাহজাদপুর সচেতন নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক মির্জা হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে যেনতেনভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ হচ্ছে। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা কার্যত ঠকছেন। এজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।
- আরও পড়ুন
- ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের থানা ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার
- বাকৃবিতে মাসে সাড়ে ২৬ লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি!
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২২৫ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ একর জমির ওপর যখন-তখন ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত আট বছরে একটি ইটের টাকাও বরাদ্দ মেলেনি।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেই-ছবি জাগো নিউজ
বিজ্ঞাপন
তবে তিনি এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন বলে জানান।
এসএইচএস/এএসএম
বিজ্ঞাপন