ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঐতিহ্যবাহী নিউজপ্রিন্ট মিলে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করার উদ্যোগ

আরিফুর রহমান | খুলনা | প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫

খুলনার ভৈরব নদীর তীরে ১৯৫৯ সালে গড়ে ওঠে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। চার দশকের লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দেখিয়ে ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কাজ হারান প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।

এশিয়ার বৃহত্তম খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্য শিল্প পার্ক স্থাপনার নামে খুলনাবাসীকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। এদিকে, খুলনার নাগরিক সমাজ একাধিকবার কাগজ মিলটি আধুনিয়কায়নের মাধ্যমে পুনরায় চালুর দাবি জানালেও হয়নি কোনো অগ্রগতি।

ঐতিহ্যবাহী নিউজপ্রিন্ট মিলে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করার উদ্যোগ

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে মিলটি-ছবি জাগো নিউজ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয় এখন এই জায়গায় কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করবে বলে উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু শুধু কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ও খুলনার ঐতিহ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ও খুলনার ঐতিহ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। ২০২২ সালে মিলটি চালুর চেষ্টা করার উদ্যোগে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি।

সুন্দরবনের গেওয়া কাঠের ওপর ভিত্তি করে ১৯৫৭ সালে নগরীর খালিশপুরে (ভৈরব নদীর তীরে) ৮৮ দশমিক ৬৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। ১৯৫৯ সালে মিলটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। তখন মিলটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৮ হাজার টন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে লাভজনক অবস্থানে থাকা মিলটি ১৯৯২ সাল থেকে লোকসান গুনতে থাকে।

১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে নিউজপ্রিন্টের ওপর ৭৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পর অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি শুরু করেন। ফলে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে উৎপাদিত ৫২ গ্রামের নিউজপ্রিন্টের চাহিদা অনেক কমে যায়। চাহিদা কম থাকলেও তা কোনো রকমে সামলে উঠেছিল মিলটি। কিন্তু সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণার পর বিপাকে পড়ে মিল কর্তৃপক্ষ। কাঁচামালের সংকটে লোকসান দিতে শুরু করে মিলটি। মাত্র সাত বছরে (১৯৯৫ থেকে ২০০২) মিলটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮৪ কোটি টাকা। ক্রমাগত লোকসান এবং মূলধনের ঘাটতির কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন।

২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন প্রদানের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। ২০০৫ সালে কারখানাটির ১৩ একর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে ইজারা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেডের জায়গায় একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি নতুন কাগজ কল তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডকে ৭৫০-৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করার জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়, যা বর্তমানে চলমান।

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ও খুলনার ঐতিহ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। নানান জটিলতায় বন্ধ হয়েছে এই মিলটি। এই মিলে থাকা যন্ত্রপাতি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে সরকার মিলটি আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি।

আরও পড়ুন

মিল সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করে মিল বন্ধ করে দেওয়ায় মেশিনপত্র অকেজো হয়ে গেছে। মেশিনের ভেতরে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যাল পড়ে থাকতে থাকতে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। তৎকালীন সময়ে এখানে কর্মরত এক্সপার্টরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে চলে যান। দীর্ঘদিন মেরামত এবং সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মিলের যন্ত্রপাতিতে সংযোজন-বিয়োজন না করার ফলে এরূপ অকেজো অবস্থা হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী নিউজপ্রিন্ট মিলে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করার উদ্যোগ

পুরোনো সেই প্রশাসনিক ভবন-ছবি জাগো নিউজ

মিল সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল ঘিরে একটা জাঁকজমক অবস্থা ছিল। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেটের কবলে এই নিউজপ্রিন্ট মিলটি ধ্বংস হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে ধীরে ধীরে এ মিলের ওপর থেকে সুদৃষ্টি উঠে গেছে, এজন্যই আজ শুধু পুরোনো কাগজপত্র এবং নামমাত্র আছে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল।

ঐতিহ্যবাহী নিউজপ্রিন্ট মিলে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করার উদ্যোগ

এক সময়ের উৎপাদনের চালচিত্র-ছবি জাগো নিউজ

আরও পড়ুন

খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল ঘিরে একটা জাঁকজমক অবস্থা ছিল। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেটের কবলে এই নিউজপ্রিন্ট মিলটি ধ্বংস হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে ধীরে ধীরে এ মিলের ওপর থেকে সুদৃষ্টি উঠে গেছে, এজন্যই আজ শুধু পুরাতন কাগজপত্র এবং নাম মাত্র আছে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল।

‘খুলনা নাগরিক সমাজ’র সদস্য সচিব ও নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ও খুলনার ঐতিহ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। নানান জটিলতায় বন্ধ এই মিলটি। এই মিলে থাকা যন্ত্রপাতি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে সরকার মিলটি আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের প্রথম দাবি মিলটি পুনরায় চালু করা। তা সম্ভব না হলে নতুন কোনো সম্ভাব্যময়ী শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করা এখন সময়ের দাবি।

ঐতিহ্যবাহী নিউজপ্রিন্ট মিলে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করার উদ্যোগ

যে লক্ষ্যমাত্রায় ছিল উৎপাদনের-ছবি জাগো নিউজ

খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, মিলের মোট জমির মধ্যে থেকে ৫০ একর জমি আগেই দেওয়া হয়েছে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিডেটকে। সেখানে তারা পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এখনও প্রায় ৪০ একর জমি রয়েছে। সেখানে বিসিআইসি নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখানে অ্যাপ্লাইড ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টের (এপিআই) প্রতিষ্ঠান চালু করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রজেক্টটি একনেকে অনুমোদন হলে কার্যক্রম শুরু হবে।

এসএইচএস/এমএস