ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তীব্র শীতে রবি শস্যে ক্ষতির আশঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫

শীত ও ঘন কুয়াশায় রবি শস্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। এছাড়া রাতভর ঘন কুয়াশা পড়ার কারণে আলুর ক্ষেতে রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ছত্রাক ধরে পাতা ও কাণ্ড পচে মরে যাচ্ছে গাছ। একই কারণে বোরো ধানের বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দিয়েছে। শীতের তীব্রতা ও কুয়াশা যদি আরও বাড়ে তাহলে বোরো বীজতলাসহ রবি শস্য বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

তারা জানান, চলতি মৌসুমে এ আবহাওয়ার কারণে বোরো ধানের চারা হলদে রঙের হয়ে যাবে। সরিষা, টমেটো ও আলু ক্ষেতে ‘লেট রাইট’ রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। শাক-সবজির সাধারণ বৃদ্ধিও ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া কুয়াশায় সবুজ পাতার স্ট্রোমা ছিদ্র হয়ে আম ও বরই গাছ রোগাক্রান্ত হতে পারে। কুয়াশার কারণে আমের মুকুলে অ্যানথ্রাক্স ও পাউডারি মিলভিউ রোগ দেখা যায়। এছাড়া আমগাছে হোপার পোকার আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে বরইতেও অ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগে বরইয়ের বাইরে কালো দাগের সৃষ্টি হয় এবং বরই পচে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সোমবারও দেশের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। তা আগামী দুই-তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। ১ জানুয়ারি থেকে ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমেল হাওয়া বয়ে চলছে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বরিশালে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১২ ডিসেম্বর ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে সূর্যের দেখা মেলেনি। শনিবার দুপুরে সূর্য মাথার ওপরে এসে উঁকি মেরেছে। রবি ও সোমবার সূর্যের আলো পড়লেও বিকেল, সন্ধ্যা, রাত ও ভোরে শীতের কমতি নেই।

এ অবস্থায় বীজতলা পচে বোরো ধানের চারা সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে কৃষকদের মাঝে। তারা বলছেন, বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন। কুয়াশার হাত থেকে রক্ষায় পলিথিন দিয়েও ঢেকে রাখছেন বীজতলা। গত আমন ও আউশ মৌসুমেও বন্যা এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ভালো ফলন পাননি তারা। এবারের শীত-কুয়াশায় বোরো নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর জেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ভুট্টা ৫৬০ হেক্টর, গম ১৭২ হেক্টর, আলু ৪২৫ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৪১ হেক্টর, শীতকালীন সবজি ৭ হাজার ৭০৪ হেক্টর, মরিচ ৭৬০ হেক্টর, পেঁয়াজ ১৯ হেক্টর, রসুন ১০ হেক্টর, ধনিয়া ৩৪০ হেক্টর, সরিষা ১ হাজার ১৭ হেক্টর, বাদাম ১৫২ হেক্টর, তিল ৩৯৬ হেক্টর, সূর্যমুখী ২৭৪ হেক্টর, সয়াবিন ৩২ হেক্টর, মসুর ২৯ হেক্টর, খেসারি ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, মুগ ৬৬৫ হেক্টর চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষকরা জানান, শীত ও ঘন কুয়াশায় আলুর ক্ষেতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ছত্রাক ধরে পাতা ও কাণ্ড পচে গাছ মরে যাচ্ছে। একই কারণে বোরো ধানের বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দিয়েছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। তবে উত্তরাঞ্চলের মতো আমাদের এদিকে শৈত্যপ্রবাহ বা ঘন কুয়াশা পড়ে না। এখন পর্যন্ত যা পড়ছে তাতে বোরোসহ অন্যান্য ফসলের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে আলু লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা বাড়লে এবং ঠান্ডা দীর্ঘমেয়াদি হলে এর প্রভাব পড়তে পারে। আলুর পাতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য কৃষকদের কিছু কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে পাতা নষ্ট হওয়া বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ মাসখানেকের মধ্যেই আলুর মূল ফলন উঠতে শুরু করবে।

এই কৃষিবিদ আরও জানান, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় রোগ প্রতিরোধে টমেটো, আলু এবং শীতকালীন লতা সবজিতে ‘রেডোমিন গোল্ড’ স্প্রে করতে হবে। আমের মুকুল ও বরইতে ভালো করে পানি স্প্রে করে দিতে হবে। যাতে করে কুয়াশার পানি ও জমে থাকা জীবাণু ধুয়ে যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম হবে।

মো. আতিকুর রহমান/জেডএইচ/জিকেএস