ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বিদ্যুৎ গেলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো হাসপাতাল

এম মাঈন উদ্দিন | প্রকাশিত: ০৬:২৪ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কাঙ্ক্ষিত সেবা। হাসপাতালে আধুনিক এক্স-রে মেশিন থাকলেও নেই রেডিওগ্রাফার। ফলে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার জনগণ। বাধ্য হয়ে রোগীদের অন্য জায়গা থেকে এক্স-রে করাতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের একমাত্র জেনারেটরটি দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে বিদ্যুৎ গেলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো হাসপাতাল।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন হাজারো রোগী চিকিৎসা নিতে যান হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে। লোডশেডিংয়ের সময় হাসপাতাল জুড়ে অন্ধকার নেমে আসে। কিছু কক্ষে একটিমাত্র বাল্ব রয়েছে। আবার অনেক কক্ষে একটিও নেই। কোনো কোনো কক্ষে জানালা দিয়ে যেটুকু আলো আসছে সেটুকুই ভরসা। এরমধ্যেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা।

কাটাছরা ইউনিয়ন থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা জোহরা বেগম বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে টিকিটের জন্যই এক ঘণ্টা লাইনে আছি। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় এখন অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে। সরকারি হাসপাতালে এমন অবস্থা দেখে দুঃখ হচ্ছে।

জানা গেছে, হাসপাতালে পাঁচজন পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ থাকলেও আছেন একজন। ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে পরিষ্কারের কাজ সারতে হচ্ছে। একজন নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় অনেক সময় দিনে বা রাতে নিরাপত্তাহীনতায় চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এছাড়া হাসপাতালে ২৭ জন চিকিৎসক নিয়োগ থাকলেও তাদের অনেকে অনুপস্থিত থাকেন।

বিদ্যুৎ গেলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো হাসপাতাল

হাসপাতালে একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিকল থাকার পর সচল হলেও রেডিওগ্রাফারের অভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এটি সচল হলেও এখনো চালু না হওয়ায় এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার পাঁচ লাখ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার সাড়ে চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৯৯৩ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন সংসদ সদস্য এম.এ জিন্নাহ এক্স-রে মেশিনটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর কয়েক মাস সচল থাকলেও তা আবার বিকল হয়। এতে দীর্ঘদিন মেশিনটি একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে। পরে ২০০৭ সালের দিকে এক্স-রে মেশিনটি মেরামত করে তা চালু করার কয়েক মাস পর আবার বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে ১৪ বছর বিকল হয়ে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে ছিল মেশিনটি। গত বছরের এপ্রিলে নষ্ট এক্স-রে মেশিন সচল হওয়ার সাত মাস পার হলেও এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার মোহাম্মদ রাশেদ জানান, দীর্ঘ সময় ধরে এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকার পর সচল করা হয়েছে। কিন্তু রেডিওগ্রাফারের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে ৮ হাজারের বেশি রোগী আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নেন। দুই হাজারের বেশি রোগী ইনডোরে সেবা নেন। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী জরুরি বিভাগ থেকে সেবা নেন। সরকারি এক্স-রে মেশিনে কোনো রোগীর এক্স-রে করা হলে তাতে রোগীর ১০০-২০০ টাকা ব্যয় হয়। অন্য কোথাও এর ব্যয় কয়েকগুণ বেশি।

বিদ্যুৎ গেলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো হাসপাতাল

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এক্স-রে মেশিনটি খুবই আধুনিক ও ব্যবহারের উপযোগী। কিন্তু পুরো চট্টগ্রামে একজন রেডিওগ্রাফারও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই এখানে এক্স-রে মেশিন চালানোর লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে মেশিনটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর দুই বছর আগে ৭০ হাজার টাকা ভিন্ন খাত থেকে এনে জেনারেটর মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু আবার নষ্ট হওয়ার পর সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ ম্যানেজ করতে না পারায় সেটিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

চিকিৎসকদের হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় অনেক ডাক্তার বিভিন্ন সেন্টারে দায়িত্ব পালন করছেন। তবুও বিশেষ ছুটি ছাড়া এখন সবসময় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সব সংকট সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য সবার সামাজিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/জেআইএম