ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সমস্যায় জর্জরিত বরগুনার সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

নুরুল আহাদ অনিক | বরগুনা | প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

দেশের অন্যতম শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বরগুনার তালতলী উপজেলা। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা শুঁটকি মৌসুমে বিভিন্ন চরে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস করেন শ্রমিকরা। এখানে কর্মসংস্থান হয় সারাদেশে থেকে আসা শ্রমিকসহ স্থানীয় কয়েক হাজার নারী-পুরুষের। তবে বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বাধার মুখে পড়েছে শুঁটকি পল্লির সম্ভাবনা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাড়ছে শুঁটকি উৎপাদন খরচ। এতে আগ্রহ কমছে ব্যবসায়ীদের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা পরিবারসহ বরগুনার তালতলীতে কাজ করতে আসেন। স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা ও ফকিরহাটসহ আরও কয়েকটি এলাকায় শুঁটকি উৎপাদনের কাজ করেন তারা। এসময় দূর থেকে আসা শ্রমিকদের অস্থায়ী ছোট-ছোট ঘর তৈরি করে থাকতে হয় শুঁটকি পল্লিতে। প্রতিটি শুঁটকি পল্লি থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০০-১৫০ মণ শু঳টকি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। তবে থাকা-খাওয়াসহ পল্লিতে পয়ঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখানকার শ্রমিকদের। বিশেষ করে স্থায়ী কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী শ্রমিকরা।

আরও পড়ুন

শুঁটকিতে কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয় না বলে বরগুনার শুঁটকির চাহিদা বেশি। শুঁটকি তৈরির জন্য নদী থেকে প্রথমে কাঁচা মাছ পল্লিতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন। পুঁটি, শোল, ট্যাংরা, খলিশা, পাবদা, কই, শিং, মাগুর, মেনি, বৈরাগী, ফলিসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ সংগ্রহের পর শুঁটকি তৈরির কাজ শুরু হয়। মাছগুলো পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় শুঁটকি।

এই চরের শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিকেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৮০০-৯০০ টাকা, রূপচাঁদা ১২০০-১৫০০ টাকা, মাইট্যা (সরমা) ৯০০-১০০০ টাকা, লইট্টা ৬৫০-৭০০, চিংড়ি ৭৫০-৯০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৪০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সমস্যায় জর্জরিত বরগুনার সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

সরেজমিন তালতলীর ফকিরহাট এলাকার শুঁটকি পল্লি ঘুরে দেখা যায়, নদী ও সাগর থেকে ট্রলারে মাছ শিকার করে পল্লিতে নিয়ে আসছেন জেলেরা। সেই মাছ কেউ পরিষ্কার করে আকার ও প্রজাতি অনুযায়ী আলাদা করছেন আবার কেউ ধুয়ে মাচায় শুকাতে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

তালতলী থেকে পাইকারদের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১৫০ মণ শুঁটকি সরবরাহ করা হয়। তবে যোগাযোগব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের সুবিধা বৃদ্ধি পেলে সরবরাহের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

সমস্যায় জর্জরিত বরগুনার সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

শুঁটকি পল্লিতে ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন পিয়ারা বেগম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নারী-পুরুষ এখানে সমানভাবে কাজ করলেও নারীদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। পুরুষরা তাদের প্রয়োজনে যে কোনো জায়গায় যেতে পারে কিন্ত আমরা নারীরা তা পারি না। টিউবওয়েলসহ এখানে যদি স্থায়ীভাবে টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।’

শ্রমিক মো. হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর আড়াই মাস হয়েছে কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে পল্লিতে মাছ সরবরাহ কম থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো বেতন নিতে পারিনি।

সমস্যায় জর্জরিত বরগুনার সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

ওমর ফারুক নামের আরেক শ্রমিক বলেন, এখানে আসা-যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। এজন্য পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করা গেলে মালিক লাভবান হবেন। তখন আমরাও সঠিক সময়ে আমাদের পারিশ্রমিক নিতে পারবো।

আরও পড়ুন

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. দুলাল জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তা দিয়ে ঠিকমতো গাড়ি আসা-যাওয়া করতে পারে না। গাড়ি ভাড়াসহ অন্যসব মিলিয়ে তুলনামূলক আমাদের বেশি খরচ হয়। দু-তিন বছর ধরে এ ব্যবসায় আমাদের লোকসান হচ্ছে। মাছের সরবরাহও কম গেছে। সামনে আরও দুই মাস সময় আছে। লাভ হবে নাকি লোকসান হবে তা বলতে পারছি না।

সমস্যায় জর্জরিত বরগুনার সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা জাগো নিউজকে বলেন, শুঁটকি পল্লিতে কর্মরত নারীদের জন্য ফ্রি মেডিকেল সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাবলিক টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে টিউবওয়েল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের বিষয়টিও দেখা হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, আমি এরইমধ্যে শুঁটকি পল্লি পরিদর্শন করেছি। সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করবো। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।

এসআর/জেআইএম