ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পাবনায় বই না পেয়ে ফিরে গেলো মাধ্যমিকের ৩ লাখ শিক্ষার্থী

জেলা প্রতিনিধি | পাবনা | প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৫

পাবনা জেলায় মাধ্যমিকের ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থীর কেউই পায়নি নতুন বই। এমনকি কবে নাগাদ বই পেতে পারে সেটিও জানেন না শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। খালি হাতে ফেরায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দ্রুত নতুন বই চান তারা।

সরেজমিনে পাবনার কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ স্কুলের গেটের সামনে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কেউ কেউ স্কুলের ভেতরে অপেক্ষা করছেন। তবে এ সংখ্যা তেমন বড় নয়। ইন্টারনেটের কল্যাণে বই না পাওয়ার বিষয়টি অধিকাংশই কিছুটা অবগত। তবে স্কুল থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বিভ্রান্ত অনেকেই। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বইয়ের অপেক্ষায় তারাও। অনেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাচ্ছেন না।

পাবনা কালেক্টরেট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাসিরের বাবা নুরুজ্জামান জানান, গত রাতে ভর্তির ম্যাসেজ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বইয়ের ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। শুধু আমাদের নয়, অন্যান্য স্কুলের অভিভাবকরাও একই বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

পাবনা জেলায় মাধ্যমিকের ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থীর কেউই পায়নি নতুন বই। এমনকি কবে নাগাদ বই পেতে পারে সেটিও জানেন না

জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির প্রভাতি শাখার শিক্ষার্থী ঈশান বলেন, কখন বই দেবে অথবা দেবে কি না কিছুই জানি না। অধিকাংশকে স্কুলে ঢুকতেই দিচ্ছে না। শুনলাম পরে দিবে। কেউ কেউ বলছেন, এ মাসের শেষের দিকে। এতদিন বই ছাড়া আমরা কীভাবে পড়বো। বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমাদের।

পাবনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার জানান, অন্যান্য বছরগুলোতে পুরো বই না এলেও ডিসেম্বরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অধিকাংশ বই স্কুলে চলে আসে। এবার সেটি হচ্ছে না জানি। কিন্তু অল্প হলেও পাবো কি না অথবা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমরাও পাইনি। তবে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বলা হয়েছে। ইংরেজি বা বাংলা গ্রামার-ব্যাকরণের মতো কিছু বিষয় ও টপিক আছে। বই না পাওয়া পর্যন্ত সেগুলো ক্লাসে শিক্ষার্থীদের দেখানো হবে বলে আমরা ভেবেছি। তবে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি।

পাবনা জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষার কুমার দাশ বলেন, মাধ্যমিকের কোনো বই পাইনি। কবে পাবো সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। আমরা নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

জেলা শিক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, উচ্চ বিদ্যালয়, কারিগরি ও মাদরাসাসহ জেলায় মোট ৬৭৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর কেউই পায়নি বছরের নতুন বই। এছাড়া প্রাথমিকে রয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব বই পৌঁছেছে জেলায়। এগুলো প্রায় সবগুলো স্কুল হাতে পেয়ে বিতরণও করেছে। তবে চতুর্থ শ্রেণির দু-একটি করে বই অল্প কিছু এলেও পঞ্চম শ্রেণির বই আসেনি।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী জানান, পাবনা সদর, সুজানগর ও ফরিদপুর উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ও গণিত এবং সপ্তম শ্রেণির জন্য বাংলা ও ইংরেজি কিছু সংখ্যক বই আসছে। এছাড়া অন্যান্য বই এখনো পাওয়া যায়নি। কবে নাগাদ পাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের কাছেও নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে কিছু বই আসবে।

পাবনা জেলায় মাধ্যমিকের ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থীর কেউই পায়নি নতুন বই। এমনকি কবে নাগাদ বই পেতে পারে সেটিও জানেন না

বই না পাওয়া অবধি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করণীয় ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা বা পরামর্শ আমরা পাইনি। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক ইউসুফ রেজা জানান, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব বই আমরা বিদ্যালয়গুলোতে দিয়েছি। এছাড়া আজ (বুধবার) দুপুরে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি কিছু বই এসেছে। ওগুলো গাড়ি থেকে আনলোড হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক মিলিয়ে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থীর বই এসেছে। বাকিগুলো দ্রুতই আসবে বলে জেনেছি।

সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে অন্তত তিনটি করে নতুন বই (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার কথা জানিয়েছিল এনসিটিবি। সেটি সম্ভব হচ্ছে না বুঝে বছরের শেষ মুহূর্তে এসে নতুন পরিকল্পনা করা হয়। বছরের প্রথম দিনে প্রতিটি উপজেলায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়ার। সেটিও পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না।

এর কারণ হিসেবে বেশকিছু বিষয় সামনে এসেছে। আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা যুক্ত করা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ইতিহাসের বেশ কিছু বিষয়েও সংযোজন-বিয়োজনসহ নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করাসহ এনসিটিবিকে অনেক কাজ নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। আবার পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করতেও দেরি হয়েছে। আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আনুষঙ্গিক কাজের অনুমোদন পেতে দেরি হওয়াতেও শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। যা কাটতে বা শতভাগ বই পেতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এফএ/জেআইএম