ঋণখেলাপিদের বাড়ির সামনে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান
একেকজন কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু এখন অনেকে সেই টাকা পরিশোধ করছেন না। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও ঋণ আদায় করতে পারছে না ব্যাংক। ফলে উপায় না পেয়ে এবার অভিনব পন্থায় ঋণখেলাপিদের কাছে টাকা পরিশোধের দাবি জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
শনিবার (২৮ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করা বিভিন্ন ঋণখেলাপিদের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সামাজিক চাপ প্রয়োগের জন্য এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ পিএলসির (এক্সিম) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। ঋণগ্রহীতারা সবাই চালকল ব্যবসায়ী। তাদের ছবি যুক্ত ব্যানার হাতে নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মো. রাশিদুল ইসলাম (অটল) একজন চালকল ব্যবসায়ী। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বালিয়াশিশা এলাকায় ‘আল্লাহর দান রাইস মিলে’র মালিক তিনি। রাইস মিলের অনুকূলে ২০১০ সালে ব্যাংক থেকে প্রথমবার ১ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। এরপর বছর বছর ঋণের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। কিন্তু ব্যাংককে ঠিকমতো টাকা দেন না। বর্তমানে তার কাছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংকের। গত ৬ মাস ধরে তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করছেন না। বার বার নোটিশ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি।
একইভাবে কবুরহাট এলাকার ‘ইফাদ অটো রাইস মিলে’র সত্ত্বাধিকারী মো. ইউনুস আলী। তার চালকলের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বর্তমানে ব্যাংক তার কাছে ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাবে। গত ৩ বছর ধরে তিনি ঋণের একটি টাকাও পরিশোধ করেননি। বার বার নোটিশ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি।
নিরুপায় হয়ে শনিবার সকাল থেকে তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এসময় মাইক হাতে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। ঋণগ্রহীতার বাড়ির সামনে এমন কর্মসূচি দেখতে আশপাশের বাসিন্দারা জড়ো হন। তারা ব্যতিক্রমী এই কাজ দেখে এর কারণ জানতে চান। পরে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি সবাইকে অবগত করেন। বেলা ১১টার দিকে কোর্টপাড়া এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন ব্যাংকের ৩০-৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী। ব্যানার হাতে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে তারা চলে যান।
সেখানে উপস্থিত ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ ইউনুছ আলী বলেন, রাশিদুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে তার বাড়ি ও অফিসে যাই। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তার জন্য আমানতকারীদের টাকা দিতে পারছি না। কারণ আমানতের টাকা দিয়েই তাদের বিনিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে রাশিদুল ইসলামের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ। বাড়ির অন্য সদস্যরাও কথা বলতে রাজি হননি।
অপরদিকে দুপুর ১২টার দিকে আরেক ঋণখেলাপি ইউনুস আলীর বাড়ির সামনে একই কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও অবস্থান নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন এক্সিম ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার এফএভিপি এবং সেকেন্ড অফিসার মইনুল হোসেন, এফএভিপি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ মো. তানসেন হোসেন, এসপিও অ্যান্ড বিনিয়োগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের গনি এবং এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মাদ খালিদ হাসান।
এ বিষয়ে ঋণগ্রহীতা ইউনুস আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
ব্যাংক কর্মকর্তা মইনুল হোসেন বলেন, শত চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সামাজিক চাপ প্রয়োগের জন্যই এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
আল-মামুন সাগর/জেডএইচ/জেআইএম